খায়রুল সরদার ও হাসিনা বেগম দম্পতির দুই ছেলে, জাফর সরদার (৩৫) ও বজলুর রহমান সরদার (৩০), বিদেশে যাওয়ার জন্য দালালদের মাধ্যমে প্রেরিত হন। তারা ভালো জীবনের আশায় তাদের ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তারা ভীষণ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
জাফর সরদারের ঘটনা:
জাফর সরদার ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট “ড্রিম হোম ট্রাভেলস” নামক একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দালালদের প্রদান করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৪ লাখ টাকা একটি এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাইপ্রাসের ভিসা না পেয়ে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দুবাই, লিবিয়া এবং তুরস্ক হয়ে তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়।
রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর, জাফরসহ ৯ বাংলাদেশিকে জোর করে ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশ নিতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজন নিহত হয়েছে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। জাফর তার পরিবারের কাছে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “যেকোনো মূল্যে আমাকে দেশে ফিরিয়ে নাও”। তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার জানান, জাফরকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে ছোট ছোট আর্মি ছাঁটে চুল কেটে প্রস্তুত করেছে।
বজলুর রহমান সরদারের ঘটনা:
বজলুর রহমান সরদার মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর, সেখানে কাগজপত্রের সমস্যা হয়ে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ তাকে আটক করে এবং বর্তমানে মালয়েশিয়ার কারাগারে বন্দী রয়েছে। তার স্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁকে কয়েকদিনের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
খায়রুল সরদার এবং হাসিনা বেগমের জীবনে এখন বড় এক দুঃসময় চলছে। তাঁদের সংসার চলে চায়ের দোকানের সামান্য আয় দিয়ে, কিন্তু দুই ছেলের বিপদে পড়ার পর তাদের আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে। গরু-ছাগল বিক্রি করে এবং ঋণ নিয়ে তাদের ছেলেদের বিদেশ পাঠানো হলেও এখন তারা তাদের খোঁজ পাচ্ছেন না। খায়রুল সরদার বলেছেন, “আমি চা বিক্রি করে সংসার চালাতে পারছি না। আমার ছেলে দুই দেশে আটকা পড়েছে।”
খায়রুল সরদার এখন তার দুই পুত্রবধূ এবং তিন নাতি-নাতনির সঙ্গে আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কারণ সংসারের চাপ মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি জানালেন, “এতদিন হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি, কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।”
জাফর ও বজলুরের পরিবার এবং তাদের মায়ের জন্য এটি এক কঠিন সময়। তাদের কষ্ট ও উদ্বেগের মাঝেই তারা প্রার্থনা করছেন এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সাহায্যের জন্য চেষ্টা করছেন।