প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে পুরনো সব জঞ্জাল পিছনে ফেলতে হবে। কেবল কথা নয়, আমরা কাজ দিয়ে দেখাব যে প্রবাসেও দেশের জন্য সংগ্রাম করা যায়। ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপজুড়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দিয়ে প্রবাসীদের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় করব। বিদেশের মাটিতে থেকেও আমরা হব দেশের পরিবর্তনের সহযোদ্ধা।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন – যেখানে দেশজুড়ে তরুণদের দাবিতে উত্তাল ছিল রাজপথ, সেখানেই প্রবাস থেকে গর্জে ওঠেন আহাদ শিকদার। ফিনল্যান্ডের বরফশীতল আবহাওয়ায়ও তাঁর কণ্ঠে ছিল তপ্ত আহ্বান। মাত্র কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে তিনি সংগঠিত করেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিকে, যারা ১৭ জুলাই হেলসিঙ্কির পার্লামেন্ট ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে এক কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন – ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই।
সেদিনের কর্মসূচি কেবল একটি সমাবেশ ছিল না, বরং প্রবাসীদের হৃদয়ে নতুন করে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আহাদ নিজেই ব্যানার-লিফলেট প্রস্তুত থেকে শুরু করে স্লোগানধ্বনি পর্যন্ত সব কিছু তদারকি করেন। আন্দোলনের দিন ও রাতজুড়ে তিনি চলেছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, ফোনে সমন্বয় করেছেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে থাকা আন্দোলনকর্মীদের সাথেও।
জুলাই-আগস্ট জুড়ে তিনি আয়োজন করেন আরও নানা কর্মসূচি – প্রতিটি কর্মসূচিতে নিজের অর্থ ব্যয় করে সহযোগিতা দেন, অনলাইন মিটিংয়ে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন এবং দেশে আন্দোলনরত কর্মীদের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রবাসীদের মধ্যে যে সংগঠিত শক্তি তৈরি হয়েছিল, তা দেশের আন্দোলনের প্রতি বিশ্বমঞ্চে সমর্থনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
মো. আহাদ শিকদার ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গলুয়া এলাকার মো. সালাম শিকদারের ছেলে। বর্তমানে তিনি ফিনল্যান্ডের LAB ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস-এ সাসটেইনেবল সলিউশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এবং খন্ডকালীন চাকুরী করছেন।
গত ২৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এনসিপি ডায়াস্পোরা এলায়েন্স, ফিনল্যান্ডে মো. আহাদ শিকদারকে আহ্বায়ক, জাহিদ হাসানকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আলমগীর হোসেনকে সদস্য সচিব , রাহাদ হোসেনকে মূখ্য সংগঠক, মনির মিয়াজিকে অর্থ সচিব ও রোমানা আফরীনকে কার্যনির্বাহী সচিব করে ছয় মাসের জন্য মোট ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঝালকাঠি এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মাইনুল ইসলাম মান্না বলেন, আহাদ শিকদার একজন বিপ্লবী নেতা। প্রবাসের থেকেও তিনি দেশের জন্য কাজ করছেন। তার সফলতা কামনা করছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডেপুটি চীফ আর্গানাইজার ডা. মাহমুদা আলম মিতু বলেন, কমিটি ফিনল্যান্ডে এনসিপির কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করবে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, আহাদ শিকদার জুলাই আন্দোলনে বিদেশে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি। দেশে–বিদেশের সব স্বাধীনতাকামী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।
এনসিপি’র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ডায়াস্পোরা কো-অর্ডিনেটর দিলশানা পারুল বলেন, ফিনল্যান্ড কমিটি প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছে। তার মতে, প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ভবিষ্যতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকা জোরদার করাই তাদের লক্ষ্য। আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে – ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও সকল অপকর্মের বিচার নিশ্চিত করা। এরপর প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার করে জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শহীদদের ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না; ন্যায় ও মর্যাদার এই লড়াইয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।







