ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে প্রতিবছর কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জমি রেজিস্ট্রির নামে সমিতির নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ফি ছাড়া কোনো অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া বেআইনি হলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা, যা সমিতির ‘তহবিল’ নামে আদায় করা হচ্ছে।
দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য কছির উদ্দিন নিজেই স্বীকার করেছেন, প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০টি দলিল লেখা হয় এবং প্রতি দলিল থেকে ৩০০ টাকা সমিতির নামে নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম জানান, “সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের ঠাকুরগাঁও জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানিয়েছেন, “অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলাও কঠিন বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির রেজা বলেন, “সুনির্দিষ্ট ফি’র কোনো তালিকা নেই। তারা খেয়ালখুশিমতো টাকা নেয়। কথা বললেও টাকা চায়।”
তবে সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, “চাঁদাবাজির অভিযোগ সঠিক নয়। সদস্যদের কল্যাণেই এই ফান্ড করা হয়। কেউ খুশি হয়ে বেশি টাকা দেয়, সেটাই আমরা নেই।”
বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরও আগেই দলিল লেখকদের অবৈধ চাঁদা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে সেই নির্দেশ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করে কীভাবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই চাঁদাবাজি? ভুক্তভোগীরা আশাবাদী—প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপে এর দ্রুত প্রতিকার হবে।