বাংলা এফএম ডেস্ক:
ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতি, যাত্রী হয়রানি ও কালোবাজারির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের আটটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনে একযোগে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছে।
গতকাল, ২৮ মে ২০২৫ (বুধবার), ঢাকাসহ রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) এবং জামালপুর সদর রেলস্টেশনে এই অভিযান চালানো হয়।
অনিয়মে জড়িত ‘সহজ ডট কম’
এর আগে ২৭ মে, অনলাইন টিকিট প্ল্যাটফর্ম সহজ ডট কম-এর প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। অভিযোগ ছিল, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ‘ভিআইপি কোটার’ নামে টিকিট ব্লক করে রাখা হয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ‘Emergency Quota (EQ)’ নামে নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট ব্লক করে রাখা হয়, যা পরে ‘বিশেষ অনুরোধে’ মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে অনিয়ম ও পক্ষপাতের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় কোম্পানির সার্ভারের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
স্টেশনভিত্তিক চিত্র
ঢাকা (কমলাপুর):
কমলাপুর স্টেশনে যাত্রী বিশ্রামের সুযোগ নেই বললেই চলে। অচল পানির কল, নাজুক টয়লেট ব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত মূল্যের খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বনলতা এক্সপ্রেসে অনুপস্থিত এটেন্ডেন্ট, অপর্যাপ্ত টিস্যু-সাবান এবং অযৌক্তিক দামি খাবার পরিবেশনের তথ্যও উঠে আসে।
রেলওয়ে ওয়ার্কশপে যন্ত্রাংশ কেনায় অতিরিক্ত মূল্যের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রাজশাহী:
ছদ্মবেশে অভিযানে কালোবাজারিদের কাছ থেকে সরাসরি টিকিট কেনার প্রমাণ পান দুদক সদস্যরা। স্টেশন কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সিলেট:
প্রায় ৭০ লাখ টাকা মাসিক বিল জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আউটসোর্সিং অ্যাটেন্ডেন্টদের বেতন কেটে নেওয়ার অভিযোগও উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম:
টিকিট বুকিং সহকারীরা আরএনবি সদস্যদের সহযোগিতায় অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করছে। মহানগর এক্সপ্রেসে টিকিটহীন যাত্রী পরিবহন এবং বাড়তি অর্থ আদায়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
রংপুর:
ওয়েটিং রুম তালাবদ্ধ, অপরিচ্ছন্নতা চরম। যাত্রীসেবায় অব্যবস্থাপনা প্রকট।
ময়মনসিংহ:
বুকিং সহকারীদের কাছে বিধিবহির্ভূত টিকিট মজুদের প্রমাণ মিলেছে।
পার্বতীপুর ও জামালপুর:
প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
দুদকের প্রতিশ্রুতি
দুদক জানিয়েছে, প্রতিটি অভিযানে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এই অভিযান প্রমাণ করে, রেলখাতে এখনও ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। জাতীয় উৎসবেও সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
“আইন সবার জন্য সমান”—এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দুদকের এই পদক্ষেপ সময়োপযোগী এবং দৃষ্টান্তমূলক।