সত্যজিৎ দাস:
বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল শুধু তাপমাত্রা বাড়ায় না, বাড়িয়ে তোলে কিছু মানুষের অদ্ভুত সামাজিক চুলকানিও। যে দেশে গরম মানেই ঘাম, হাঁপানি আর অতিষ্ঠতা, সেখানে মানুষকে আরাম খুঁজে নিতে হয় তার পছন্দমতো হালকা পোশাকে। কিন্তু সেই ‘আরাম’ হয়ে ওঠে সমালোচনার শিকার,যদি তা লুঙ্গি বা ম্যাক্সির মতো সামাজিকভাবে ‘কম সম্মানজনক’ বিবেচিত কিছু হয়।
একজন মানুষ দিনভর কাজের পর যদি ঘরে ফিরে একটু পাতলা লুঙ্গি পরে বসে, বা কেউ যদি গরমে ম্যাক্সি পরে স্বস্তি পেতে চায়—তাতেই সমাজের কিছু লোকের চোখ লাল হয়ে ওঠে। তারা ভাবেন,এই পোশাক পরা মানেই অশ্লীলতা,মানেই চরিত্রের অবনমন। অথচ বাস্তব সত্য হলো—চুলকানি পোশাকের কারণে হয় না,হয় মানসিক গোঁড়ামি থেকে।
এই সমাজে এখনও অনেকে বিশ্বাস করে,শরীর ঢেকে রাখলেই চরিত্র ঢাকা পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো,প্যান্ট-আন্ডারওয়্যার পরে যেমন চুলকানি হতে পারে,তেমনি শাড়ি-পেটিকোট পরেও। চুলকানির দায় কোনো কাপড়ের নয়,দায় সেই মানসিকতার, যা পোশাক দেখে মানুষ যাচাই করে।
আগেকার সময়ের মতো আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে বেশকিছু লোক “মলম, মলম!” বলে ঘুরে বেড়াতো। তারা অন্তত জানত,শরীরের অস্বস্তি কীভাবে দূর করতে হয়। কিন্তু এখন যারা পোশাক নিয়ে মুখে ফেনা তুলছে,তাদের জন্য আজও কোনো মলম তৈরি হয়নি। তাদের জন্য দরকার একটুখানি টাইগার বামের ঝাঝের মগজ ধোলাই।
এই গরমে কেউ যদি লুঙ্গি পরে,ম্যাক্সি,গাউন পরে বা হালকা পোশাকে ঘুরে বেড়ায়—তাতে কারও চোখে সমস্যা হলে বুঝতে হবে,সমস্যা কাপড়ে নয়,তাদের মাথায়। কেননা পোশাক মানুষের প্রয়োজন আর আরামের জন্য,সমাজের গন্ধ নেওয়ার জন্য নয়।
এই গরমে নিজের শরীরকে আরাম দিন,আর অন্যের আরামে চুলকানো বন্ধ করুন। কারণ গরম নাহয় কাটবে কিছুদিনে,কিন্তু এই সমাজিক চুলকানি না কাটলে,অসুখটা থেকে যাবে বহুদিন।