সত্যজিৎ দাস:
মানবসম্পর্কের জটিলতা বহু শতাব্দী ধরে গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী ও পুরুষের মানসিক এবং শারীরিক চাহিদার পার্থক্য সম্পর্কের গভীরতা ও টিকে থাকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সমাজ ও সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করলেও,মনোবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান এ বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়।
একজন পুরুষ সাধারণত শারীরিক সংযোগের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। বিপরীতে, একজন নারী প্রথমে মানসিক সংযোগ স্থাপন করতে চায়,তারপর শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহী হয়।এই পার্থক্যের কারণ খুঁজতে হলে আমাদের হরমোন,মানসিক গঠন ও সামাজিক conditioning -এর দিকে নজর দিতে হবে।
বিজ্ঞান বলে,পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে,যা তাদের শারীরিক চাহিদাকে প্রভাবিত করে। শারীরিক সংযোগের মাধ্যমে পুরুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়,যা তাকে মানসিকভাবে প্রশান্ত করে ও সঙ্গীর প্রতি আরও আবেগী করে তোলে।
ক্লিনিকাল নিউরোসায়েন্স জার্নাল (Clinical Neuroscience Journal) -এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়,’শারীরিক সংযোগের মাধ্যমে পুরুষের মানসিক চাপ কমে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুযায়ী, ‘একজন পুরুষ যখন তার সঙ্গীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়, তখন তার মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন ও অক্সিটোসিন নিঃসরণ ঘটে,যা তাকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল ও সুখী করে। এ কারণে পুরুষরা সাধারণত শারীরিক সংযোগের পর আরও সংবেদনশীল ও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে’।
নারীদের ক্ষেত্রে অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাকটিন হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে,যা তাদের মানসিক সংযোগ ও আবেগের ওপর প্রভাব ফেলে। নারী যদি মানসিকভাবে স্বস্তিতে না থাকে,তাহলে তার শারীরিক চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা অনুসারে, নারী যখন মানসিকভাবে নিরাপদ ও সুখী অনুভব করে,তখন তার শরীর ডোপামিন ও অক্সিটোসিন নিঃসরণ করে,যা তাকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে স্বস্তি বোধ করায়।
ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষণায় বলা হয়েছে,’নারীরা যদি মানসিকভাবে অশান্ত থাকে,তাহলে তাদের শরীর কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বাড়িয়ে দেয়,যা তাদের শারীরিক আকর্ষণ কমিয়ে দেয়’।
এ কারণেই নারীরা সঙ্গীর কাছ থেকে বিশ্বাস, আবেগীয় সংযোগ ও নিরাপত্তা পেলে তবেই শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহী হয়।
নারী ও পুরুষের এই স্বতন্ত্র চাহিদার পার্থক্য কেবল জৈবিক নয়,এটি সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো পুরুষ তার সঙ্গীর মানসিক চাহিদাকে উপেক্ষা করে কেবল শারীরিক সংযোগে গুরুত্ব দেয়,তাহলে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে। একইভাবে,যদি কোনো নারী তার পুরুষ সঙ্গীর শারীরিক চাহিদাকে অবহেলা করে,তাহলে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
একজন নারী সম্পর্কের ভিত মজবুত করার বিশাল ক্ষমতা রাখে। ইতিহাস সাক্ষী—নারী চাইলে একটি পরিবারকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারে, আবার চাইলে তা ধ্বংসও করতে পারে।
১) নারী তার ভালোবাসা ও মানসিক শক্তি দিয়ে একজন পুরুষকে জীবনের সেরা মানুষে পরিণত করতে পারে।
২) একজন নারী তার সঙ্গীর ক্যারিয়ার, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
৩) নারীর আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence) সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল ভিত্তি।
সম্পর্কের সাফল্য নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া,সম্মান ও ভালোবাসার ওপর। পুরুষ যদি নারীর মানসিক সংযোগের গুরুত্ব বোঝে এবং নারী যদি পুরুষের শারীরিক সংযোগের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে,তাহলে সম্পর্ক হয়ে উঠবে গভীর,সুদৃঢ় ও পরিপূর্ণ।
নারী চাইলে পারে একটি সুন্দর সমাজ ও সুখী পরিবার গড়তে। তার ভালোবাসা হোক পরিবারের ভিত্তি, তার মমতা হোক সম্পর্কের শক্তি,আর তার উপস্থিতি হোক সঙ্গীর জন্য আশীর্বাদ।