ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দায়ের করা কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে সম্পূর্ণ খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, সেটি বাতিল করে আজ (মঙ্গলবার) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগে এই প্রথম কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আপিল বিভাগে খালাস পেলেন। আজহারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে তার মুক্তিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই। তারা বলেন, দীর্ঘ কারাবন্দি জীবনের অবসান ঘটিয়ে এখন তিনি মুক্তির মুখে।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “এই রায়ের জন্য আমরা প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। এটিএম আজহারুল ইসলামকে সকল অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি ছিল বিচার ব্যবস্থার নামে চরম অবিচারের প্রতিচ্ছবি।” তিনি আরও বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্য কখনও হার মানে না। এটি ছিল নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার একজন মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার দিন। এই ঘটনা ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আজহারুল ইসলামকে। এরপর ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি আপিল করেন। আপিলের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং ২০২০ সালের ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
তবে একই বছরের ১৯ জুলাই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনানির মধ্যেই মামলাটি ফের পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে, যা মানবতাবিরোধী মামলার ইতিহাসে এটাই প্রথম। অবশেষে সেই পুনরায় শুনানিতেই আজ রায় ঘোষণার মাধ্যমে আদালত তার সব অভিযোগ খারিজ করে দেন।
এই রায়ের ফলে এটিএম আজহারুল ইসলাম এখন মুক্তির দ্বারপ্রান্তে। দীর্ঘ ১৩ বছরের কারাবন্দি জীবনের অবসান হতে যাচ্ছে তার। বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এই রায় নতুন এক অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে, যেখানে এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্য শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।