কোরবানির পশুর চামড়া যেন নষ্ট না হয় এবং দেশের অর্থনীতিতে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারে—এ লক্ষ্যেই কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার (১ জুন) রাতে ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। সভায় কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া একটি মূল্যবান জাতীয় সম্পদ, যা সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ট্যানারি শিল্পে সরবরাহ করলে দেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, চামড়া পচনশীল হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, আর নষ্ট চামড়ার কোনো মূল্য নেই। তাই কোরবানিদাতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে চামড়া যথাসময়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।
তিনি জানান, এবারই প্রথমবারের মতো কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য লবণ চাষিদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মণ লবণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, “প্রথম দিন কিছুটা গন্ধ হতে পারে, তবে ঠিকমতো পরিষ্কার করে লবণ দিলে তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।”
চামড়ার দরপতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একসময় ২৫ হাজার টাকার গরুর চামড়ার দাম ছিল ২ হাজার টাকা, এখন ১ লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ২০০ টাকা—এটি একদম অস্বাভাবিক।” তিনি আরও জানান, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে, যাতে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যায়। তবে দেশেই চামড়া রপ্তানির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহতামিম মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হুসাইন, খিলগাঁও মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, মুফতি জাবের কাসেমী ও মুফতি আব্দুল মালেক প্রমুখ। তাঁরা সবাই কোরবানির মৌসুমে চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনায় ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করেন, যাতে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত আবারও প্রাণ ফিরে পায়।