নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’। কিন্তু সেই কৌশল বাস্তবায়নের প্রকল্পেই ধরা পড়েছে অনিয়ম ও প্রশ্নবিদ্ধ ব্যয়। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহায়তায় নেওয়া ‘ন্যাশনাল ইন্টেগ্রিটি সাপোর্ট প্রজেক্ট (দ্বিতীয় পর্যায়)’ নামের প্রকল্পে ব্যয়ের বড় অংশই গেছে পরামর্শক নিয়োগে, অথচ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে দেখা যায়নি সাফল্যের ছাপ।
২০১৯ সালে ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় প্রকল্পটি, যার মধ্যে ১৬৭ কোটি টাকার বেশি ছিল জাইকার ঋণ। ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প শেষ হয় এক বছর পর, ২০২৩ সালে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)–এর সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের প্রায় ৬৭ শতাংশ অর্থ, অর্থাৎ ১০১ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে শুধু পরামর্শক নিয়োগে। অথচ এ খাতে অনুমোদিত বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া কম্পিউটার সফটওয়্যারের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা—অনুমোদনের চেয়ে ৭% বেশি।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, জনজীবনে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলেনি প্রকল্পটি। ২৫ শতাংশ সেবা গ্রহীতা অভিযোগ করেছেন, সরকারি সেবা পেতে হয়েছে ঘুষ দিতে। ৮৮ শতাংশ বলছেন, অভিযোগ করেও পাননি প্রতিকার।
যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবুও দুর্বল তদারকি, অনিয়মিত কমিটি সভা এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে মূল লক্ষ্য অর্জনে ঘাটতি রয়ে গেছে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এ ধরনের অনিয়ম বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটা দীর্ঘদিনের সংস্কৃতির ফল। শুদ্ধাচার উন্নয়নের নামে অশুদ্ধাচার মেনে নেওয়া যায় না। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়িয়ে যদি প্রকল্পের নামে অনিয়ম চলতেই থাকে, তবে নাগরিকদের আস্থা যেমন হারাবে সরকার, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশ্ন উঠবে বাংলাদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের মানদণ্ড নিয়ে।