২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রক্রিয়ায় বন্দর ও দেশের ক্ষতি হবে উল্লেখ করে এ ধরনের চুক্তি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।
এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে আস্থাভাজন নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা একসময়ের র্যাবের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান করে পাঠানো হয়। সরকার পতনের পর বন্দর থেকে গিয়ে র্যাবের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি।
বর্তমান চেয়ারম্যানের নিয়োগ নিয়ে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (অব) বলেন, তার মূল চাকুরি তো নৌ-বাহিনীর। তিনি এই কর্পোরেশনের চাকুরির জন্য তো ইউনিফর্ম পড়েননি। ওনার কি এমন বিশ্বাসযোগ্যতা যার জন্য তাকে পোর্টে আবার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? যেসকল দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট আছে তারাই তাকে কম্ফোর্টেবল পেয়েছে বলে আবার তাকে নিয়োগ দিয়েছে।
বন্দর বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, ২০২২ সাল পর্যন্ত এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না সরকারের। হঠাৎ এই প্রক্রিয়া কেন শুরু হলো তা বোধগম্য নয়।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, মূলত বিদেশি কোম্পানিকে সামনে রেখে পতিত সরকারের একটি পক্ষ লুটেপুটে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। নইলে একটি টার্মিনাল স্মুথলি চলা অবস্থায় বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। এমন দেশবিরোধী পরিকল্পনা এখনো চলমান থাকাটা দুঃখজনক। তার মতে, বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে দীর্ঘদিন টেন্ডার ছাড়া কাজ করে যেসব প্রতিষ্ঠান মনোপলি ব্যবসা করছিল তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা সরকারের পলিসি মেকাররা ঠিক করবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে গ্লোবাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে যে মনোপলি ব্যবসা হচ্ছে তা বন্ধ হবে।