প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল—এমন অকাট্য প্রমাণ উন্মোচন করেছে বিবিসির ইনভেস্টিগেশনস ইউনিট ‘বিবিসি আই’। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে শফিকুল আলম বলেন, “যখন একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিবিসি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অপরাধ উন্মোচনে তাদের সম্পূর্ণ অনুসন্ধানী সক্ষমতা কাজে লাগায়, তখন বিশ্বকে অবশ্যই তা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিতে হয়।” তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবিসি আই-এর অনুসন্ধানে যে অডিও প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, তা ২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভ দমন অভিযানে শেখ হাসিনার ভূমিকার ‘চূড়ান্ত সত্য’ উন্মোচন করেছে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, “সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে—এটি এক বিষয়। কিন্তু যখন একটি বিশ্বমানের, নিরপেক্ষ এবং ফরেনসিক সক্ষমতাসম্পন্ন গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে তদন্ত করে এই অভিযোগকে প্রমাণে রূপ দেয়, তখন সেটি ভিন্ন মাত্রা পায়।”
তিনি জানান, ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং, যা আন্তর্জাতিক অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা যাচাই করেছেন, তা প্রমাণ করে সহিংসতা ছিল না তাৎক্ষণিক বা দুর্ঘটনাবশত—বরং এটি ছিল পরিকল্পিত এবং অনুমোদিত হত্যাকাণ্ড।
“এখন আর এই প্রমাণ গল্পনির্ভর, রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বা গুজব নয়। এটি ফরেনসিক, যাচাইযোগ্য এবং আর উপেক্ষাযোগ্য নয়,” বলেন শফিকুল আলম।
ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “অনেক দিন ধরে ভারত বাংলাদেশের অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। এখন আর সেই অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “ভারত এখন এমন একজনকে রক্ষা করতে পারে না, যার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-সমর্থিত, বিশ্বমানের অনুসন্ধানে প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে।”
তিনি মন্তব্য করেন, “আঞ্চলিক বন্ধুত্ব, কৌশলগত জোট কিংবা কোনো রাজনৈতিক উত্তরাধিকার—কোনো কিছুই সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরার অজুহাত হতে পারে না। যুক্তরাজ্যের একটি প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম যখন এমন ভয়াবহতা উন্মোচন করে, তখন ভারতের উচিত ন্যায়বিচার ও নৈতিকতা বিবেচনায় পদক্ষেপ নেওয়া।”
বিবৃতির শেষাংশে শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। ভিকটিমদের শান্তি পাওয়ার অধিকার আছে। আর বিশ্বের উচিত দেখা যে কোনো নেতা, যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন।”