সিলেটের আলোচিত এক প্রেমের গল্প শেষ পর্যন্ত গড়াল বিয়েতে—তাও আবার কারাগারের ভেতরে। প্রেম করে তরুণীকে ঘনিষ্ঠতার ফাঁদে ফেলে সন্তানসহ তাকে ফেলে পালিয়ে যাওয়া শিমুল আহমদ শেষ পর্যন্ত আদালতের আদেশে বিয়ে করলেন আলফাতুন্নেসা লিমাকে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে কাজী ডেকে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে সম্পন্ন হয় এই বিয়ে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উভয় পরিবারের স্বজন ও আইনজীবীরা। বিয়ের সময় তাদের ৪ বছর বয়সী কন্যাসন্তানটিও ছিল সেখানে।
কারা সূত্র জানায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের কলাশহরের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে শিমুল আহমদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান আলফাতুন্নেসা লিমা। প্রেমের একপর্যায়ে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান শিমুল। এতে লিমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু এরপরই হঠাৎ করে শিমুল পালিয়ে যান এবং দীর্ঘদিন লাপাত্তা থাকেন।
সন্তানের জন্মের পর একাধিকবার শিমুলের বাড়িতে গিয়ে স্বীকৃতি ও বিয়ের দাবিতে উপস্থিত হন লিমা, তবে প্রত্যেকবারই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে ২০২২ সালের ৭ মার্চ এসএমপির শাহপরাণ থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন লিমা। মামলার প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল শিমুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।
পরবর্তীতে শিমুল জামিন চেয়ে মহানগর দায়রা জজ ও উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। সম্প্রতি আদালত তাদের বিয়ের নির্দেশনা দিলে কারা কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে।
বিয়ের কাজী সজীব আহমদ বলেন, “আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দুই পরিবারের উপস্থিতিতে আমি তাদের বিয়ে সম্পন্ন করি। তাদের ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে। বিয়ের সময় উভয়েই খুশি ছিলেন এবং একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।”
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আরিফুর রহমান জানান, “আদালতের বিবাহ-সংক্রান্ত আদেশ পেয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। বিয়ের পর আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এখন যদি তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকে, তাহলে শিমুল মুক্তি পেতে পারেন।”
এই ঘটনাটি সিলেটজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। প্রেম, বিচ্যুতি, আইনি লড়াই ও অবশেষে বিয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্কের পরিণতি পাওয়াকে অনেকেই দেখছেন বিচারের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে।