মোহাম্মদ মাসুদ মজুমদার:
দেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদের টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু মুনাফা নয়, প্রয়োজন দেশের প্রয়োজন ও বাস্তবতা বিবেচনায় কাজ করার। গরুর দেশীয় জাত সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “গরুর দেশীয় জাত হারানোর বিনিময়ে আধুনিক জাত দরকার নেই।” তিনি আরও বলেন, দেশীয় জাত রক্ষা করেই যেন দুধ ও মাংস উৎপাদন করা যায়, সেই লক্ষ্যেই সবাইকে কাজ করতে হবে।
১৩ মে মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘দেশীয় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, “দেশীয় জাত হারিয়ে যাচ্ছে—এটি পুরোপুরি ঠিক নয়। উন্নত জাতের কথা বলে বিভিন্ন সময় বিদেশি জাতের গরু আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফ্রিজিয়ান বা ক্রসবিট ছাড়া উপায় নেই—এই বক্তব্য আসলে প্রশ্নবিদ্ধ।” তিনি মনে করেন, বিদেশি জাতের গরু টেকসই নয়। তাই দেশীয় গরু রক্ষায় এখনই একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করা জরুরি।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নামকরণ তখনই সার্থক হবে, যখন দেশীয় জাত সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে। “সিমেন এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক,” বলেন উপদেষ্টা। তিনি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি দেশীয় গরুর জাত রক্ষায় ‘জোনভিত্তিক’ প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব দেন। দেশের এক অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের জীবনযাপনের যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি প্রাণিরও ভিন্নতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফরিদা আখতার। তাই গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার ওপর জোর দেন তিনি।
সেমিনারে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশীয় গরুর জিনগত বৈচিত্র্য হলো আমাদের একটি বড় সম্পদ। এই বৈশিষ্ট্য ভবিষ্যতের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে তাপ সহনশীলতা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাচ্চা দেওয়ার ধারাবাহিক ক্ষমতা দেশীয় গরুর অন্যতম শক্তি।
তারা বলেন, দেশীয় জাতের উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত প্রজনন কৌশল তৈরি করা জরুরি, যাতে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে স্থানীয় জাতের সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন সম্ভব হয়।
সেমিনারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাকিলা ফারুক।
প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সফিকুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. বয়জার রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজামান খান।