পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ২০১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, চলচ্চিত্র শিল্পী জায়েদ খান, সাংবাদিক, সাবেক উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা এসেছে ৩০ এপ্রিল, মঙ্গলবার। মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু—যিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন—এর আগে ২০ মার্চ আদালতে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন।
বাদীর আইনজীবী এ বি এম জোবায়ের জানান, আদালত শাহবাগ থানাকে প্রথমে নির্দেশ দিয়েছিল, এ সংক্রান্ত কোনো মামলা আগে করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে জানাতে। পুলিশ জানায়, এমন কোনো মামলা আগে হয়নি। এরপর আদালত বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে চলমান ‘এক দফা’ অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া একটি মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি পরীবাগ এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে এবং সেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে সাইফুদ্দিন চোখে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বাদী হাশেম রাজু।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটনা এবং সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। ‘আলো আসবে’ নামক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি সরকারপন্থী অবস্থানকে ‘গ্লোরিফাই’ করেছেন।
মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের নামজাদা ব্যক্তিত্ব—মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, রিয়াজ, ফেরদৌস, আশনা হাবীব ভাবনা, সাজু খাদেম, রোকেয়া প্রাচী, অরুনা বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতি, শামীমা তুষ্টি, শমী কায়সার ও সোহানা সাবা।
গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন—ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবেদ খান, আলমগীর হোসেন, সন্তোষ শর্মা, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল হক, মুন্নি সাহা, ফরিদা ইয়াসমিন, মিথিলা ফারজানা, মাসুদা ভাট্টি ও ফারজানা রুপা।
শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবী মহলের অনেকেই মামলার তালিকায় আছেন। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হারুন অর রশীদ, জাহাঙ্গীরনগরের আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মান্নান, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, লেখক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নজরুল ইসলামসহ অনেকে।
এছাড়া মামলায় পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খান, গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার এবং সাবেক জেলা জজ হেলাল চৌধুরীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সবশেষে, মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরও অনেকে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে অংশগ্রহণ ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছে দেশজুড়ে নানা মহল। এই মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।