বাংলাদেশ এখন আর গরিব দেশের তালিকায় নেই, সমস্যা অন্য জায়গায়—দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ডুবছে দেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ বলছেন, আমাদের সমস্যা সম্পদের ঘাটতি নয়, বরং সেই সম্পদ রক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবই বড় চ্যালেঞ্জ।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘পিএফএস: পলিউশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে রাষ্ট্রভাণ্ডার শূন্য হলেও সেটাকে চুরি বলা হয় না। তার মতে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের দুর্নীতি দেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ, যা এই জাতিকে ভেতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “যে বাংলাদেশ আমরা হাতে পেয়েছি, সেটাকে ফেরেশতাও কয়েক মাসে ঠিক করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব এখন এটিকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এনে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।”
শারমিন মুরশিদ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশে হাজারো মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছে, শত শত শিশু মারা গেছে—এই ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হবে না। আমরা চাই না রাজনৈতিক দলগুলো আবার সেই পুরনো পথেই হাঁটুক। বরং তারা যেন নিজেদের শুদ্ধ করে জনগণের পাশে দাঁড়ায়।”
তিনি বলেন, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে। পানি দূষণ, নদী দখল আর পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমের কারণে জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। “আমরা একা এটা সামাল দিতে পারবো না, রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
পানির দূষণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আজও দেশের বহু জায়গায় পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে। কেন আমরা এখনও মাটির নিচের পানি ছাড়া অন্য কোনো নিরাপদ উৎস নিশ্চিত করতে পারছি না? নদী আমাদের বিশাল সম্পদ, কিন্তু সেগুলোকে রক্ষা তো দূরের কথা, আমরা আজও শোধন পর্যন্ত করতে পারিনি।”
গার্মেন্টস খাত নিয়েও সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, “যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিককে ৫ টাকা বেশি দিতে চায় না, তারা পরিবেশ বাঁচাবে কীভাবে? এ দেশে ছোট-বড় সবখানেই ধ্বংসাত্মক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চর্চা চলছে। এই ধারা আমরা ৫৪ বছর ধরে লালন করছি।”
শেষে তিনি বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সময়টি নীতিনির্ধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাতে সময় কম। যারা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন, এখনই সময় দ্রুত মাঠে নামার। সরকারের দরজা সবার জন্য খোলা—আপনারা এগিয়ে আসুন, একসাথে পরিবর্তন আনুন।”