রাজধানীর দ্রুতগতির উড়াল সড়কে (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) আট মাস আগে সংঘটিত একটি আলোচিত স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এতে ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট করা হয়।
তদন্তের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এরইমধ্যে তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন–
🔸 কুমিল্লা জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার
🔸 কনস্টেবল মিজানুর রহমান
🔸 কনস্টেবল আবু বকর
এছাড়া, লুটের কাজে ব্যবহৃত কালো রঙের মাইক্রোবাসের চালক আব্দুস সালামকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
কী ঘটেছিল সেদিন?
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও দীর্ঘ তদন্তের মাধ্যমে এ ডাকাতির রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুরান ঢাকায় আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন খালা সাজিয়া সুলতানা ও খালাতো বোন জিনাত সুলতানা।
ঢাকা পৌঁছে তারা একটি উবার প্রাইভেট কারে করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি কালো মাইক্রোবাস তাদের গাড়ির গতিরোধ করে।
মাইক্রোবাস থেকে চারজন ব্যক্তি নেমে নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেয় এবং সাইফুলসহ সবাইকে হাতকড়া পরিয়ে জোর করে সেই গাড়িতে তুলে নেয়।
মাইক্রোবাসটির জানালাগুলো কালো হওয়ায় ভেতরের কিছু বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল না। গাড়ির ভিতর সাইফুল ইসলাম ও তার আত্মীয়দের মারধর করে, মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করার হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে সর্বস্ব—including ৭০ ভরি স্বর্ণ—লুটে নেয়। এরপর তাদের রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায়।
সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস
ডিবি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
প্রসঙ্গত:
দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন নয়। তবে এই ধরনের সাজানো যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতি জনমনে চরম উদ্বেগ ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।