স্টাফ রিপোর্টার :
সদ্য ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি চলচ্চিত্র অনুদান নিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ঘিরে সামাজিকমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকে। এবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবিতে সরব হলো ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ’ নামক সংগঠন।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতি
শুক্রবার (৪ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, “জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি অনুদান প্রক্রিয়াকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশের পর থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অনুদান প্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও পক্ষপাতহীন হতে হবে।”
মূল অভিযোগসমূহ:
সংগঠনটির বিবৃতিতে অনুদান প্রক্রিয়ার দুর্বলতা হিসেবে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে:
- অস্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়া:
মাত্র ২–৩ মিনিটের পিচিংয়ে অনুদান চূড়ান্ত, নেই কোনো লিখিত মানদণ্ড। আমলাদের প্রভাব বেশি, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের মতামত গৌণ। - কমিটির সদস্যদের হতাশা:
একাধিক কমিটির সদস্য নিজেরাই সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ্যে হতাশা জানিয়েছেন। - স্বার্থের সংঘাত (Conflict of Interest):
অনেক কমিটির সদস্য নিজেরাই অনুদান পেয়েছেন, যা সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, দুদক আইন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপের সুপারিশ:
সংগঠনটি অনুদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও করেছে—
- নম্বর প্রকাশ:
প্রতিটি ধাপে সব বিচারকের প্রদত্ত নম্বর জনসমক্ষে প্রকাশ। - আপিল প্রক্রিয়া:
নির্মাতারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন—এমন একটি কাঠামো থাকা। - স্বার্থের সংঘাত রোধে বিধি প্রণয়ন:
যে কেউ সরকারি কমিটির দায়িত্বে থাকলে, একই অর্থবছরে তিনি বা তাঁর নিকটজন যেন অনুদান না পান, তা নিশ্চিত করতে নিয়ম করা। - মানদণ্ড স্পষ্ট করা:
কাকে কোন ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হলো—তা স্পষ্টভাবে জানানো। - চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা:
জুরি ও কমিটিতে চলচ্চিত্র পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো। - স্কোর উন্মুক্তকরণ:
চলতি অর্থবছরের অনুদান স্কোর প্রকাশ।
কাদের ঘিরে বিতর্ক?
এবার প্রকাশিত অনুদান তালিকা অনুযায়ী, অনুদান পেয়েছেন এমন কয়েকজনই রয়েছেন অনুদান কমিটি বা জাতীয় পরামর্শক বোর্ডে। যেমন:
- মো. আবিদ মল্লিক: অনুদান উপ-কমিটির সদস্য হয়েও নিজেই অনুদানপ্রাপ্ত।
- সাদিয়া খালিদ রীতি: স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য; অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকায় তাঁর সংশ্লিষ্টতা আছে।
- মো. আরিফুর রহমান ও মুশফিকুর রহমান: পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং অনুদানপ্রাপ্ত।
- লাবিব নাজমুস ছাকিব ও সাইদুল আলম খান: সংশ্লিষ্ট সরকারি কমিটিতে থেকেও অনুদান প্রাপ্তদের সাথে সম্পৃক্ত।
সংগঠনের দাবি:
“চলচ্চিত্র উন্নয়নের জন্য চাই বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব, যা শিল্পী, নির্মাতা, গল্পকার ও নতুনদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে,”—বলে সংগঠনটি। তারা অনুরোধ জানায়, যেন অনুদান প্রক্রিয়া দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন হয়।
পটভূমি:
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩২টি চলচ্চিত্রকে ১৩ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
তবে এই অনুদান প্রক্রিয়া নিয়েই চলচ্চিত্র পাড়ায় ফের উঠেছে প্রশ্ন—‘যাঁরা দেবেন, তাঁরাই নিচ্ছেন?’