বিশেষ প্রতিবেদক:
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতা, ভবঘুরে ও মাদকসেবীদের দখলদারিত্ব এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় বিপর্যস্ত। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক দুঃস্বপ্নের নগরীতে পরিণত হয়েছে—যেখানে জ্ঞানচর্চার পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে এক অজানা অন্ধকারে।
মাদকাসক্ত ও বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য
২৫ মে রাতে সিনেট ভবনের সামনে গাঁজা সেবনের সময় চার বহিরাগতকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন ঢাবির কিছু সচেতন শিক্ষার্থী। তবে এমন ঘটনা এখন আর বিরল নয়। রাত বাড়লেই রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, মল চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গা দখলে নেয় তিন শতাধিক ভবঘুরে ও মাদকসেবী।
ফুটপাতজুড়ে টাঙানো মশারি, উলঙ্গ ভবঘুরে, প্রকাশ্যে মলত্যাগ, এমনকি নারী হলের সামনেও অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলার ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকিতে
বিশেষ করে কবি সুফিয়া কামাল হল এলাকায় নারীরা সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “টিউশনির পথে এক ব্যক্তি আমার হাত ধরে ফেলে, চিৎকার করে রক্ষা পাই। এসব এখন রোজকার ঘটনা।”
যানবাহনের দৌরাত্ম্য
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একাডেমিক এরিয়ায় অবাধে চলাচল করছে অটোরিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরবাইক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, “এমন চলাচল শুধু ক্লাস ব্যাহত করছে না, বরং আমাদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”
হত্যা ও সহিংসতার ভয়াবহ দৃষ্টান্ত
১৩ মে রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এসএম শাহরিয়ার আলম সাম্য। গত বছর ফজলুল হক হলে ভবঘুরেকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও শিক্ষার্থীদের মনে গভীর শঙ্কার ছাপ রেখে গেছে।
প্রশাসনের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ দাবি করেন, প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং এটি আরও ১০-১২ দিন চলবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—এসব পদক্ষেপ লোক দেখানো এবং তাৎক্ষণিক; বাস্তব কোনো সমাধান আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা তানবীর বারী হামীম বলেন, “সাম্য হত্যার পরও প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এখনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেমে নেই।”
প্রগতির পথ থেকে ছিটকে যাচ্ছে প্রগতিশীল ক্যাম্পাস
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বলছে, “নিরাপত্তা শুধু বহিরাগত উচ্ছেদ নয়; এটি একটি সামগ্রিক ব্যবস্থা, যা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ।”
এক সময় দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ছিল এই ক্যাম্পাস। আজ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এই পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগজনক নয়, বরং একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষার সংকেতও বহন করছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা যেন দেশের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আর নিরাপদ বিদ্যাচর্চার স্থান?