নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মিরপুর রোড সংলগ্ন গণভবন প্রাঙ্গণে নির্মিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী ৫ আগস্ট এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাদুঘরটির নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে স্মারক সংগ্রহ ও স্থাপনার চূড়ান্ত রূপদান। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জাদুঘরে থাকবে জুলাই আন্দোলনের স্থিরচিত্র, শহীদদের জামাকাপড়, চিঠিপত্র, পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিও দলিল এবং সময়কার নানা স্মৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
জাদুঘরে বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে সে সময়কার স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ, শেখ হাসিনার পলায়নের ঐতিহাসিক মুহূর্ত, এবং গণভবন দখলের জনস্মুদ্রের প্রতিচ্ছবি। এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অধীনেই একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে পরিচালিত হবে।
ইতিহাস ও রূপান্তরের ধারাবাহিকতা
জানা যায়, গত বছরের ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ বাতিল করা হয়। এর ফলে শেখ হাসিনার পরিবার গণভবনে থাকার আইনি অধিকার হারায়। এরপরই গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় এবং ২ নভেম্বর জাদুঘর রূপান্তর কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এর ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি অংশ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশে জাদুঘর
প্রায় ১৭.৬৮ একর জমিজুড়ে অবস্থিত সাবেক গণভবনে রয়েছে দুই তলা মূল ভবন, লন, পুকুর, ফলবাগান এবং খেত। এই এলাকা রাজধানীর ব্যস্ততার মাঝেও এক টুকরো সবুজ পরিবেশ হিসেবে দেখা যায়।
দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গণভবনের ফটক খুলে যায়, জনতা প্রবেশ করে। সেই ঘটনার ভাঙচুরের চিহ্নগুলো কিছুটা ‘তথ্যচিহ্ন’ হিসেবে রেখে দেওয়া হচ্ছে, যেন দর্শনার্থীরা সেসব স্মৃতি স্পর্শ করতে পারেন।
স্মৃতির সংগ্রহ চলছে, সবাইকে আহ্বান
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্কাইভ ও কালেকশন টিম ইতোমধ্যে দেশজুড়ে স্মারক সংগ্রহে নেমেছে। কারও কাছে ঐ সময়ের কোনো চিঠি, ছবি বা স্মৃতি থাকলে তা জাদুঘরে জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
উপসংহার
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ কেবল একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক জ্বলন্ত দলিল হয়ে থাকবে। শহীদদের আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার বীরত্ব, ও গণজাগরণের ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এটি এক অনন্য প্রয়াস।