সদরুল আইন:
গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুর নতুন বাজার এলাকায় জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় ছাদ থেকে লাফিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের কারণে ওই শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। এর জেরে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় ওই এলাকা।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবশেষ মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টার দিকে সেখানে পুলিশর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এক পর্যায়ে ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া শ্রমিকদের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। তারা কারখানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান।
তবে এর আগেই সোমবার রাত থেকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা প্রতিরোধের মুখে পুলিশের একটি এপিসি (আমর্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়িতে ভাঙচুর চালান।
একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা থেকে ছুটি চাওয়ায় জাকির হোসেন নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে তিনি অপমানে কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হলে পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে সেখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
ভবনের ৮ তলা থেকে লাফ দিয়ে মারা যাওয়া মো. জাকির হোসেন (২৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরর জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের কারখানায় কাজ করতেন।
আল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, জাকির হোসেন ছু্টি চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিয়ে দুর্ব্যবহার করে। এ কারণে জাকির হোসেন হতাশ হয়েছিলেন। তবে কোন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইতে গিয়েছিলেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সময় এই হামলা চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, পারিবারিক কলহের কারণে হতাশ ছিলেন জাকির। এ অবস্থায় ছাদে হাঁটাহাঁটির সময় অসাবধানতাবশত পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কারখানার এজিএম জুবায়ের এম বাশার বলেন, ছুটি চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শ্রমিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরেছি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল থেকেই পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
তবে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। এই মুহূর্তে কতজন শ্রমিক আটক করা হয়েছে তা বলা সম্ভব না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিল্প পুলিশের একটি এপিসি ভাঙচুর করেছে।’