বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরে মন্দাক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও বৈদেশিক বাণিজ্যের দুরবস্থার মধ্যে দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এর পরেও আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি বছর বাজেটের আকার বৃদ্ধি করেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট ছিল রেকর্ড ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা বাস্তবায়নের আগেই গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা হারায় সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার এ বাজেটকে সংশোধন করে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়েছে। তবুও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম, কারণ চলতি বছর জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থমন্ত্রী ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করবেন প্রস্তাবিত বাজেট, যার আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি কম, কিন্তু সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি বেশি।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে, আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয় বলেই অর্থনীতিবিদদের মত। বাজেট ঘাটতি প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা দেশি-বিদেশি ঋণ ও ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পূরণ করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার এগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে জনকল্যাণমুখী বাজেট দিতে পারে এমন প্রত্যাশা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে বাজেটের দিকনির্দেশনা তেমন স্বস্তিদায়ক নয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটের আকার বাড়ানো হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বরং ঋণের বোঝাই বাড়ছে।
বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নে গুণগত পরিবর্তন কম। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে চাপ বেড়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ এখনও কমেনি।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট দর্শন হিসেবে বলেছেন, এবার “সমতাভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র” গড়ে তোলাই লক্ষ্য। কিন্তু বাজেটের বাস্তব চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।