শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদের পূর্বেই ১০০% উৎসব ভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ী ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং EFT সমস্যার দ্রুত সমাধানসহ ১০ দফা দাবিতে মানব বন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও মাননী প্রধান উপদেষ্টা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে “বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)”।

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদের পূর্বেই ১০০% উৎসব ভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ী ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং EFT সমস্যার দ্রুত সমাধানসহ ১০ দফা দাবিতে সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামীম আল মামুন জুয়েল-এর সঞ্চালনায় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া, উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব আলী আহামেদ, অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম, সহ সভাপতি বেগম নূরুন্নাহার, মোঃ গোলাম রববানী, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার, মীর মনিরুজ্জামান, মোঃ হারুন অর রশিদ, মোঃ আব্দু কাদের, আব্দুল মালিক রাজু, চাঁন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ রফিকুল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নূরুল আমীন রতন, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আসাদুল আলম, মোঃ আনোয়ারুল কবির, মোঃ ফজলুল হক, অর্থ সম্পাদক প্রবীর রঞ্জন দাস, আইন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ ওবায়দুর রহমান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিক সম্পাদক দুলালী বিশ্বাস, মহিলা সম্পাদক তুহিনা আক্তার, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোঃ জাহিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যপক আবুজামিল মোঃ সেলিম, নাসরিন নাহার, ফকির আব্দুল কাদের, মোঃ সোহরাব হোসেন শিকদার, আফতাফ হোসেন চৌধুরী, মোঃ আব্দুল্লা আল মামুন, এস এম নাজমুল হোসেন, মোঃ আবুল কাশেম, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ হাবিবুর রহমান, এস এম মোজাম্মেল কবির টুটুল, শাহ আজিজুর রহমান, পাপিয়া পারভীন ও ফকির হামিম হোসেনসহ প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। আর শিক্ষক হচ্ছেন “শিক্ষার মেরুদন্ড”, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিও ভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১,০০০/- টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০/- টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
NTRCA এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১২,৫০০/- প্রারম্ভিক বেতনে শত-শত মাইল দূরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের কোন বদলীর ব্যবস্থা না থাকা এবং এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে EFT এর মাধ্যমে সয়ংক্রিয় ভাবে বেতন প্রদান করা হলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফলতির কারণে অনেক এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৩ থেকে ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া বিগত সরকার কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই সম্পূণ অবৈধভাবে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পায়নি। সদ্য বিদায়ী মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক-কমচারীদের মাঝে হতাশা বিরজ করছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জাতির বিবেক শিক্ষক হিসেবে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA)’র ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে ০১ আগস্ট-২০২৩ পর্যন্ত ২২ দিন লাগাতার অবস্থান ও পরিশেষে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। যে কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জসহ অতি বাড়াবাড়ির কারণে বিটিএ’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়াসহ অনেক শিক্ষক-কর্মচারী আহত হন এবং ১ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির রোষানলে পড়ে তাঁর নির্দেশে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ কে ষড়যন্ত্র করে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। যা মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত করা স্বত্বেও তাঁকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। ডা. দীপু মনির নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও বিরোধিতা স্বত্বেও অবিরাম কর্মসূচি চলাকালীন গত ০১ আগস্ট ২০২৩ তৎকালীন সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের উত্থাপিত দাবিসমূহ যৌক্তিক বলে বিবেচিত হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে দুটি কমিটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ী ভাড়া ও চিকিসা ভাতাসহ বিদ্যমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্যসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আন্দোলন মূলতবী করে শ্রেণি কক্ষে ফিরে গেলেও বিগত পতিত সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রতি রক্ষা করেননি।
তাই সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ সৃষ্টি, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্টকরণ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নিকট মাধ্যমিক শিক্ষাজাতীয় করণসহ (ক) আসন্ন ঈদুল ফিতরের পূর্বেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ী ভাড়া ও চিকিসা ভাতা প্রদান (খ) EFT সমস্যার দ্রুত সমাধান (গ) সরকারি স্কুলের ন্যায় বেসরকারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষক’-এর বেতন স্কেল ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ৭ম গ্রেডসহ টাইম স্কেল প্রদান (ঘ) এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বজনীন বদলী প্রথা চালু, সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পেনশন প্রথা চালুকরণ এবং চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা প্রদানসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন বন্ধ করা (ঙ) শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় ৬৫ বছরে উন্নীত করা (চ) পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হারে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের পদায়ন (ছ) ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় পরিচালনা এবং (জ) স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করার জোর দারি জানান।
মানব বন্ধন শেষে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ মিছিল সহকারে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যান এবং বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বলেন এর পরেও যদি দাবি পূরণে সুনিদিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারী করা না হয় তাহলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে সারা দেশের হতাশ ও বিক্ষুব্দ এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কমচারীগণ কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।