শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদ-উল আযহা’র পূর্বেই ১০০% উৎসবভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ীভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করেছে “শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ”।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদ-উল আযহা’র পূর্বেই ১০০% উৎসবভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ীভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ শামীম আল মামুন জুয়েল-এর সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার, মোঃ হারুনুর রশিদ মজুমদার, মোঃ শাজাহান খান, বিটিএ’র উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব আলী আহামেদ, বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম, আবুল কাসেম, সহ সভাপতি বেগম নূরুন্নাহার, অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান প্রামানিক, মোঃ মহিউদ্দিন, সুনীল বরন হালদার, মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার, মীর মনিরুজ্জামান, নীহার কান্তি বাছাড়, এ বি এম আব্দুল আলীম, মোঃ হারুন অর রশিদ, মোঃ লিয়াকত হোসেন, চাঁন মিয়া, আব্দুল মালিক রাজু, মোঃ আব্দু কাদের ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সচিব মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদার, অধ্যক্ষ মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ভূইয়া ও মোঃ বাবুল হোসেনসহ প্রমুখ শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ বলেন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। আর শিক্ষক হচ্ছেন “শিক্ষার মেরুদন্ড”, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১,০০০/- টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০/- টাকা চিকিৎসাভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
NTRCA এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১২,৫০০/- প্রারম্ভিক বেতনে শত-শত মাইল দূরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের কোন বদলীর ব্যবস্থা না থাকা এবং এমপিও ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে EFT এর মাধ্যমে সয়ংক্রিয় ভাবে বেতন প্রদান করা হলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফলতির কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৩ থেকে ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া বিগত সরকার কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পায়নি। সদ্য বিদায়ী মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক-কর্মচারদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও বেশ কিছু বছর জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের জোর দাবি জানান।
শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জাতির বিবেক শিক্ষক হিসেবে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA)’র ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে ০১ আগস্ট-২০২৩ পর্যন্ত ২২ দিন লাগাতার অবস্থান ও পরিশেষে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অণশন কর্মসূচি পালন করেছে। যে কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জসহ অতি বাড়াবাড়ির কারণে বিটিএ’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়াসহ অনেক শিক্ষক-কর্মচারী আহত হন এবং ১ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির রোষানলে পড়ে তাঁর নির্দেশে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ কে ষড়যন্ত্র করে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। যা মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত করা স্বত্বেও তাঁকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। ডা. দীপু মনির নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও বিরোধিতা স্বত্বেও অবিরাম কর্মসূচি চলাকালীন গত ০১ আগস্ট ২০২৩ তৎকালীন সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের উত্থাপিত দাবিসমূহ যৌক্তিক বলে বিবেচিত হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে দুটি কমিটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা, বাড়ীভাড়া ও চিকিসাভাতাসহ বিদ্যমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্যসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আন্দোলন মূলতবী করে শ্রেণি কক্ষে ফিরে গেলেও বিগত পতিত সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রতি রক্ষা করেননি।
তাই সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ সৃষ্টি, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্টকরণ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নিকট নিম্ন লিখিত ১১ দফা দাবি জানান:-
১। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ শিক্ষা খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক জিডিপি’র ৬% বরাদ্দ করা ২। আসন্ন ঈদ-উল আযহা’র পূর্বেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিসাভাতা প্রদান করা ৩। সরকারি স্কুলের ন্যায় বেসরকারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষক’ -এর বেতন স্কেল ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ৭ম গ্রেডসহ টাইম স্কেল প্রদান করা ৪। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বজনীন বদলী প্রথা চালু করা ৫। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পেনশন প্রথা চালুকরণ এবং চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা প্রদানসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন বন্ধ করা ৬। শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় ৬৫ বছরে উন্নীত করা ৭। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হারে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের পদায়ন করা ৮। ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় পরিচালনা করা ১০। শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা ১১। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জোর দাবি জানান।
মহাসমাবেশে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন যদি আগামী ১৭ মে ২০২৫ এর পূর্বে দাবি পূরণে সুনিদিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারী করা না হয় তাহলে সারা দেশের হতাশ ও বিক্ষুব্দ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ আগামী ১৭ মে ২০২৫ সকাল ১০ টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।