সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৭৩ বছর পার হলেও মৌলভীবাজার জেলার চার ভাষাসৈনিক এখনও পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ভাষার জন্য লড়াই করা এই চার অগ্রদূত—সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, সৈয়দ মতিউর রহমান, মফিজ আলী ও রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী—বাংলার মাটিতে বীরত্বের সাক্ষর রাখলেও নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন।
এই চারজনের মধ্যে রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরীই একমাত্র জীবিত ভাষাসৈনিক,যিনি এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায়।
ভাষাসৈনিকদের অবদান ও উপেক্ষাঃ-
(১) মোহাম্মদ ইলিয়াস: তৎকালীন দক্ষিণ শ্রীহট্ট (মৌলভীবাজার) মহকুমার কমলগঞ্জ থানার কুশালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকায় সরাসরি ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি এখনো অনিশ্চিত।
(২) সৈয়দ মতিউর রহমান: কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন। এরপর ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। স্থানীয়ভাবে কিছু সংস্থা তাঁকে সম্মাননা দিলেও সরকারিভাবে তাঁর কোনো স্বীকৃতি নেই।
(৩) মফিজ আলী: পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামের এই সংগ্রামী নেতা ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায়ও কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তাঁকে সংবর্ধনা দিলেও এরপর আর কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি।
(৪) রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী: শ্রীমঙ্গলের নোয়াগাঁও গ্রামের এই ভাষাসৈনিক ছিলেন শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করলেও সংকীর্ণ রাজনীতির শিকার হয়ে তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ওঠেনি।
স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণঃ-
বিশ্লেষকদের মতে,এই ভাষাসৈনিকরা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত না থাকায় কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অবহেলার কারণে সরকার তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বৃত্তি চালু করা হলেও মৌলভীবাজারের এই চার কৃতী সন্তান উপেক্ষিত রয়ে গেছেন।
ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পরও এই চার সাহসী মুক্তিকামী মানুষের অবদানের স্বীকৃতি না থাকা আমাদের জাতির জন্য এক বড় ব্যর্থতা। তাদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।