ঢাকার গুলশানে সরকারি জমি দখল এবং অবৈধভাবে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়ার ঘটনায় ব্রিটিশ এমপি ও ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের প্রায় দুই বিঘা জমি ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের বিনিময়ে তিনি একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, টিউলিপের এই ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘটনাটি শুধুই একটি সুবিধাভোগ নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত এবং দীর্ঘমেয়াদী জালিয়াতির অংশ। এর মাধ্যমে ইস্টার্ন হাউজিং নিয়ম ভেঙে জমি দখল করে এবং ৩৬টি ফ্ল্যাট অনুমোদন করিয়ে নেয়।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৪ সালে, যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীর অনুরোধে ঢাকা ইম্রুভমেন্ট ট্রাস্ট তাকে প্রায় দুই বিঘা জমি ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়, শর্ত ছিল—এ জমি হস্তান্তর করা যাবে না। কিন্তু ১৯৭৪ সাল থেকে জমিটি বিভিন্নজনের হাতে গিয়ে পৌঁছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের হাতে।
২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে টিউলিপের পক্ষ থেকে ওই জমিকে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের নামে রূপান্তর করা হয়। এরপর রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় জমিটি ৩৬টি ফ্ল্যাটে ভাগ করে নেওয়া হয়, যেখানে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিক নিজের নামে গ্রহণ করেন।
দুদক গত মার্চে ফ্ল্যাটটির খোঁজ পাওয়ার পর আদালতের অনুমোদনে সেটি জব্দ করে। এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পুরো কেলেঙ্কারির চিত্র।
দুদক জানিয়েছে, এই ঘটনায় টিউলিপ সিদ্দিক এবং রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম এবং রাজউকের আরেক সাবেক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ সেলিম মারা যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, “রাজউকের বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই—সেই জমি ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটে পরিণত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জবাবদিহি থাকা উচিত।”
এর আগে পূর্বাচলে শেখ পরিবারের নামে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির ঘটনায়ও টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক।