মনোয়ার বাবু, ঘোড়াঘাট, (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় একটি মাজারের ৪৮তম ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় হযরত গাউসুল আজম রহিম শাহ বাবা ভান্ডরী রওজা শরীফ এর মাজারে ওই ওরসের আয়োজন চলছে। এখানে ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত ৪৮তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে স্থানীয় মুসল্লিদের একটি পক্ষ ওরসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে মিছিল করে আয়োজন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যেই চলছে তিন দিনব্যাপী ওরস উদ্যাপনের প্রস্তুতি।
স্থানীয় জনতা ও সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ অভিযোগ করে বলেন, ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয় ওই মাজারে। মাজারের লোকজন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ঢোল, তবলা ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গান,বাজনা ও জিকির করেন। এছাড়া প্রতি বছরের ১৮ ফাল্গুন ওরসের নামে নারী-পুরুষ একত্রে হয়ে ভণ্ডামি, মাদক সেবন করেন। মাজার প্রাঙ্গণে নামাজ পড়ার জন্য কোন মসজিদ নেই। মুসলমান হয়ে কোরআন ও ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করেছেন তাঁরা। আগামী ১০ ফাল্গুন (২৩ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদানসহ ১৭, ১৮, ১৯ ফাল্গুন মাজারের বিপরীত পাশে মাঠে রমজানের তাৎপর্য, ইফতার ও দোয়া মাহফিলের ঘোষণা দেন সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ ব্যানারে মুসুল্লিরা।
ওলামা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা কামরুজ্জামান সাহেবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আরশাদ হোসাইন সঞ্চালনায় ৩নং সিংড়া ইউ’পি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, হাফেজ মাওলানা মোজাফফর হোসেন, হাফেজ সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মাহমুদ, মুফতি মোহিবুল্লাহ, সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের সহ-সভাপতি মোমিনুল ইসলাম মিছিল শেষে ভান্ডারী মাজারের ওরস প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের সামনে বড় একটি তোরণ করা হচ্ছে। মাজারের কয়েকটি জায়গায় সামিয়ানা টাঙানোর কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। জোরেসরে চলছে ওরসের প্রস্তুতি।
এ সময় কয়েকজন ভক্ত বলেন, ‘৪৭ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি; কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না। কিন্তু অহেতুক ওরস বন্ধের দাবি করছে একটি পক্ষ।’
মাজারের খাদেম শহিদুল ইসলাম জিন্নাহ জানান, ওরস উদ্যাপনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ১৭,১৮,১৯ ফাল্গুন লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। এত বছর ওরস উদ্যাপনে কোনো বাধা আসেনি; কিন্তু এবার স্থানীয় হুজুররা এটি বন্ধ রাখতে বলছেন। মাজার ভাঙার হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের নিরীহ পেয়ে ওরস বন্ধের পাঁয়তারা করছেন হুজুররা। এরপরও তাঁরা যেকোনো মূল্যে ওরস করবেন।
উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার বিকাল ৫ টায় মাজার এলাকা পরিদর্শন যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ আনোয়ার হোসেন। এসময় মাজারের খাদেম এবং স্থানীয় মুসল্লিদের সাথে কথা বলেন। বিশৃঙ্খলা এরাতে তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি নাজমুল হক জানান, ওরস ঘিরে তৈরি উত্তেজনা নিরসনে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে নজরদারি বৃদ্ধির সাথে সর্তক অবস্থায় আছে পুলিশ।