সদরুল আইনঃ
এমনিতেই ইলিশের দাম চড়া। আর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তা যেন ক্রেতার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
যে ইলিশ যত বড়, তার দর তত বেশি। রাজধানীর বাজারে এক কেজি বা তারচেয়ে একটু বেশি ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
ইলিশ কিনবে কি, দাম শুনেই ক্রেতারা রীতিমতো হতাশ। অবশ্য দরদাম করে কিনলে দুইশ/একশ টাকা কমেও পাওয়া যাচ্ছে।
পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগে গতকাল শনিবার রাজধানীর শান্তিনগর ও কাওরান বাজারে ইলিশের দরদামের এ চিত্র পাওয়া যায়। এ সময় ইলিশ কিনতে আসা একজন ক্রেতা অনেকটা হতাশার সুরে বলেন, ইলিশ যে দেশের মাছ-দাম শুনে তা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়।
কিন্তু ইলিশের দামের এ অবস্থা কেন? গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদনও বাড়ছে ইলিশের। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে দেশের এই মাছটির স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। ভোক্তারা এজন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন।
তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছে। তা না হলে ইলিশ মাছের এত দাম কেন হবে?
গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এবার যেন জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবেন না।
তিনি পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ইলিশ খায় তাদের বুঝতে হবে ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। এক দিন পরেই পহেলা বৈশাখে যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন তারা মূলত জাটকা খাবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী বা সাগর থেকে ইলিশ আহরণের পর ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কয়েকটি হাত ঘুরে। এসময়ই মাছটির দাম বেড়ে যায়। যে ইলিশ যত বড়, তার দর তত বেশি। এছাড়া, অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করেও ইলিশের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইলিশ পাচার হয় কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ মৎস্য করপোরেশনের (বিএফডিসি) এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মাস দুয়েক আগে সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি সাগর থেকে সরাসরি ইলিশ কিনে রাজধানীতে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। তখন কিন্তু অনেক কম দামের ভোক্তারা ইলিশ মাছ খেতে পেরেছেন।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে কিনতে গেলে দাম হয় আকাশচুম্বী। তারমানে এখানে কারসাজি আছে। তিনি বলেন, এ কারসাজি ভাঙ্গতে সরকারকে কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ ইলিশ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে ৫ লাখ টনের বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন।
এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের যেতে চাই না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের বিষয়ে এখনই আগাতে চাই না।
প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রাকৃতিক রাখাই ভালো। আমরা যদি এই মুহূর্তে সেই দিকে যাই তাহলে আমাদের গবেষণা হারিয়ে যেতে পারে। কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এর ক্ষতিকর প্রভাব কিন্তু ইতিমধ্যে দেখছি। এটা আমার দিক থেকে একটা সতর্কবার্তা।’
গতকাল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে (বিএআরসি) ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরূপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।