বিশ্বের দৌড়প্রেমীদের অনুপ্রেরণার প্রতীক ফৌজা সিং মারা গেছেন। ১১৪ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই কিংবদন্তি অ্যাথলেট। সোমবার বিকালে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর-পাঠানকোট মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। মাথায় আঘাত পাওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। চিকিৎসকেরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। বর্তমানে তাঁর মরাদেহ স্থানীয় মর্গে রাখা আছে। বিদেশে থাকা সন্তানদের ফেরার পর তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ।
ফৌজা সিংয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে পুরো ক্রীড়াজগত। পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়া গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, শতায়ু বয়সেও সমাজের কল্যাণে তিনি ছিলেন সক্রিয়। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ‘নেশামুক্ত রঙলা পাঞ্জাব’ অভিযানে তাঁর সঙ্গে পদযাত্রার স্মৃতি আজও অমলিন।
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল, পাঞ্জাবের জলন্ধরের বেয়াস গ্রামে জন্ম ফৌজা সিংয়ের। জীবনের মাঝপথে স্ত্রী ও সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। জীবনসঙ্গী হারানোর বেদনা ভুলে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজতে গিয়ে ৮৯ বছর বয়সে শুরু করেন দৌড়। ২০০০ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েই বিশ্ববাসীর নজরে আসেন তিনি। এরপর টানা নয়টি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেন— যার মধ্যে লন্ডন, নিউইয়র্ক ও টরন্টোর মতো বড় আসর ছিল। ২০০৩ সালে টরন্টো ম্যারাথনে পাঁচ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে শেষ করেন তাঁর সবচেয়ে দীর্ঘ ম্যারাথন।
ক্রীড়াজীবন ছাড়িয়ে মানবিক মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ফৌজা সিং। ২০০৪ সালের এথেন্স ও ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে অলিম্পিক মশাল বহনের বিরল সম্মান পেয়েছিলেন তিনি। বিশ্ব ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে তাঁকে। তাঁর জীবনের গল্প শুধু অ্যাথলেটদের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য এক অনন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।