তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। শুরুটা খুব একটা স্বস্তির ছিল না। তাঁর প্রথম ওভারেই এল ১৭ রান—দুই চার ও এক ছক্কায়। স্কোরবোর্ডে রান কম, এমন শুরুর পর অনেকেই ভেঙে পড়তে পারেন। বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষে থাকেন কামিন্দু মেন্ডিস আর কুশল মেন্ডিসের মতো আগ্রাসী ব্যাটার। কিন্তু সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ান তানভীর। তৃতীয় ওভারে মাত্র এক রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট, আর তারপর থেকে একে একে সাজঘরে ফেরান পাঁচ ব্যাটারকে। ১০ ওভারে ৩৯ রানে তুলে নেন পাঁচ উইকেট—যা হয়ে উঠেছে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পথচলা আর ত্যাগের গল্প। বরিশালের ছেলে তানভীর বড় হয়েছেন নানির কাছে। নানির কাছেই ব্যাট-বলের আবদার করতেন ছোটবেলায়। পাড়ার বড় ভাইদের খেলা দেখেই জন্ম নেয় ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। বরিশাল বুলসের এক টিম বয়ের মাধ্যমে মাথায় ঢুকে ঢাকার একাডেমির স্বপ্ন। কিন্তু বাবার ইচ্ছা ছিল তানভীর হোক প্যারামেডিক বা পুলিশ কর্মকর্তা। শেষ পর্যন্ত নানির আবদার আর নিজের জেদে তানভীরের জন্য বাবাকে রাজি করানো যায়—দুই বছরের সময় মিলে যায় ক্রিকেটে কিছু করে দেখানোর জন্য।
ধানমন্ডির একাডেমিতে ভর্তি হয়ে শুরু হয় তানভীরের যাত্রা। তৃতীয় বিভাগ থেকে শুরু করে প্রথম বিভাগ, সেখান থেকে খেলাঘর ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে ২৭ উইকেট তুলে প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নেওয়া, তারপর বিপিএলে খুলনা টাইটানসের স্কোয়াডে যোগ—প্রতিটি ধাপে নিজের শ্রম আর প্রতিভা দিয়েই এগিয়ে গেছেন তানভীর।
দীর্ঘদিন সাকিব আল হাসানের উপস্থিতিতে বাঁহাতি স্পিনে খুব একটা ভাবতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু যখন সাকিব ব্যস্ততা বা বিরতির কারণে বাইরে থাকেন, তখন নতুনদের সামনে সুযোগ আসে। তানভীর প্রথম ওয়ানডেতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও সাড়া ফেলতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই দেখিয়ে দিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তা কাজে লাগাতে জানেন।
৮ বছর আগে যার হাত ধরে শুরু হয়েছিল তার পেশাদার ক্রিকেট যাত্রা, সেই নাফিস ইকবাল কাল উপস্থিত ছিলেন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অনুবাদকের ভূমিকায়। হয়তো তাঁর চোখে ছিল ভিন্নরকম এক গর্ব। তানভীর? হয়তো মনের ভেতর তৃপ্তির হাসি, মুখে গম্ভীরতা। কারণ তিনি জানেন, সুযোগ এলেই সেটাকে কাজে লাগাতে হয়—এই বিশ্বাসেই তিনি এখন জাতীয় দলের ম্যাচসেরা।