মাদ্রিদ, স্পেন – স্পেনের প্রাক্তন ফুটবল ফেডারেশন (RFEF) সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসকে স্পেনের হাইকোর্ট যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ২০২৩ সালের ফিফা মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্পেনের জয়ের পর ফুটবলার জেনি হারমোসোকে জোরপূর্বক চুম্বন করার জন্য তাকে €১০,৮০০ (£৮,৯৪২) জরিমানা করা হয়েছে।
কী ঘটেছিল?
২০২৩ সালের ২০ আগস্ট, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেন ১-০ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতে। ম্যাচ-পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে, লুইস রুবিয়ালেস উল্লাসের মধ্যে স্পেনের তারকা খেলোয়াড় জেনি হারমোসোকে জোরপূর্বক চুম্বন করেন, যা সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী বিতর্ক সৃষ্টি করে।
হারমোসো পরে জানিয়েছিলেন যে তিনি এই চুম্বনের জন্য কোনো সম্মতি দেননি এবং এটি তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তবে রুবিয়ালেস দাবি করেছিলেন যে চুম্বনটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল।
আইনি লড়াই ও আদালতের রায়
ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর, হারমোসো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন, এবং স্পেনের প্রসিকিউটর রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও জবরদস্তির অভিযোগ আনেন।
দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানির পর, স্পেনের হাইকোর্ট জানায় যে:
- চুম্বনের ঘটনাটি হারমোসোর সম্মতি ছাড়া ঘটেছিল, যা যৌন নিপীড়নের শামিল।
- রুবিয়ালেস ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং খেলোয়াড়ের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
- আদালত তাকে €১০,৮০০ জরিমানা করার নির্দেশ দেয়।
- এ ছাড়া, চার বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনাও রয়েছে, যদিও তার আইনজীবীরা আপিল করতে পারেন।
প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
এই ঘটনাটি স্পেনে নারীদের অধিকার ও ক্রীড়াঙ্গনে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। রুবিয়ালেসের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়, যার ফলে:
- স্পেনের মহিলা ফুটবল দল বিক্ষোভের অংশ হিসেবে জাতীয় দলে খেলা থেকে বিরত থাকে।
- বিশ্বব্যাপী খেলোয়াড়, সংগঠন এবং সমর্থকরা #SeAcabó (এটা শেষ) নামে একটি আন্দোলন শুরু করে, যা ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের প্রতি অসম আচরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে।
- অবশেষে, ব্যাপক চাপে রুবিয়ালেস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এই মামলার রায় স্পেন ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নারীদের সম্মতি ছাড়া এমন আচরণ যে গ্রহণযোগ্য নয়, সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে আদালতের সিদ্ধান্ত। রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবিতে এখনও অনেকে সোচ্চার রয়েছেন, এবং এই ঘটনাটি ক্রীড়াক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।