রুশাইদ আহমেদ, বেরোবি:
নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থার অভাবে একাডেমিক ভবনগুলোর সামনে যত্র-তত্র যানবাহন পার্ক করে রাখার কারণে প্রায়শই চরম দুর্ভোগে পড়ছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় ভবনগুলোর পাশে সত্বর গ্যারেজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরেও এই চিত্র সামনে এসেছে। দেখা গেছে, কর্মদিবসগুলোতে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর সামনে প্রায়শই সাইকেল ও মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখেন সেখানে কর্মরত কর্মচারী, কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। অনেকসময় পাশে থাকে গাড়িও। কয়েকটি ভবনের সম্প্রসারণ কাজ চলমান থাকায় সে সব ভবনের সামনে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রীও।
এতে করে ভবনগুলোর প্রবেশপথ অনেক সংকুচিত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ভীড় বা জটলা হলে যানবাহনগুলোর বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়ে বা সরু পথে চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে আহতও হন কেউ কেউ।
পাশাপাশি, ভবনগুলোর সামনে থেকে সাইকেল চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পাশে একটি ছোট গ্যারেজ থাকলেও একাডেমিক ভবনগুলোর আশপাশে তেমন কোনো কোনোকিছুই নেই।
তবে কবি হেয়াত মামুদ ভবন ও একাডেমিক ভবন-২ এর মাঝখানে একটি টিনশেডের স্থাপনাকে আগে অস্থায়ী গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর সেটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরে রূপ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে একাডেমিক ভবন-৩ এর শিক্ষার্থী মো. জাহিদ বলেন, আমাদের একাডেমিক ভবনের সামনে এভাবে হ-য-ব-র-ল করে যানবাহন রেখে দেওয়ার কারণে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিশেষ করে ক্লাস শেষে বা ক্লাস শুরুর আগে এখান দিয়ে ভবনে ঢুকতে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেও আমাদের ভবন সংখ্যা কম থাকায় প্রত্যেকটা ভবনে অনেকগুলো বিভাগের ৪-৫টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাস করতে হয় একইসময়ে। তাই ভবনগুলোর পাশে স্থায়ী একটা গ্যারেজ করা হলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
কবি হেয়াত মামুদ ভবনের শিক্ষার্থী ফাহিম শাহারিয়ার বলেন, ক্লাসে প্রবেশকালে প্রায়ই জটলাবদ্ধ সাইকেলগুলোর গ্যাপে পা আটকে পড়ে যান অনেকে। আবার কখনো মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে পোশাক আটকে ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজেও এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি কয়েকবার। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন বিশৃঙ্খলা কারোরই কাম্য নয়।
একই ভবনের বাংলা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, আমাদের ভবন আর ২ নম্বর ভবনের মাঝখানে আগে একটা স্থাপনাকে গ্যারেজ হিসেবে সাইকেল আর মোটরসাইকেল রাখা হতো অস্থায়ীভাবে। এখন সেটি মন্দির। কিন্তু একাডেমিক ভবনগুলোর সামনে এভাবে সেগুলো রাখা ভালো দেখায় না। শিক্ষার্থীরাও ঝামেলায় পড়েন ক্লাস শেষে বের হওয়ার সময়। তাই একটি গ্যারেজের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্যই সুবিধা হবে।
এ দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণগুলোতে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত কোনো গ্যারেজ এখনও স্থাপন করা হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলেও নানা জটিলতায় কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পার্কিংয়ের জন্য জায়গা নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে জায়গার স্বল্পতা ও বাজেট জটিলতার কারণে এখনো তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তবে শিক্ষার্থীরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন। তাদের দাবি, নির্দিষ্ট জায়গায় গ্যারেজ নির্মাণ ও পার্কিং নীতিমালা প্রণয়ন করা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, “গার্ডেন নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখানে শৃঙ্খলা চাই।”