মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আন্তঃসেশন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাফত ছাত্র মজলিস, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সব ছাত্র সংগঠন তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
শনিবার ও রবিবার (১২ ও ১৩ জুলাই) এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানা যায়।
বিবৃতিতে শাখা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেন, “আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
ছাত্রদল আরও উল্লেখ করে, ক্যাম্পাসে সংবাদকর্মীরা সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মধ্যে সহনশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।
তারা বলেন, “ঘটনাটি অনভিপ্রেত হলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।”
আলাদা বিবৃতিতে রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইবি ছাত্রশিবির সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, “১২ জুলাই বিকেল ৫টায় অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় সাংবাদিকদের মারধরের খবর শুনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
তারা বলেন, “আমরা আহত সাংবাদিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করুন। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
অন্য আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “১২ জুলাই বিকেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির সময় সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের উপর নির্মম হামলা চালানো হয়। এ হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত।”
তারা জানান, “সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ ভিডিও ধারণ করতে গেলে শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং পরে দলবেঁধে সাংবাদিকদের মারধর শুরু হয়। এতে নূর ই আলম, রবিউল আলমসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হন।”
ছাত্র ইউনিয়ন আরও দাবি করে, “ঘটনার পরপরই হামলাকারীরা একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালায়, যেখানে একজন নারী শিক্ষার্থীকে ভিকটিম সাজিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।”
তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।”
বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. সাদেক আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ খান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”
তারা আরও বলেন, “গণমাধ্যম রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। এর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।”
বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া, ইবি শাখার সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি এস এম শামীম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সাংবাদিকদের উপর হামলা শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
তারা আরও বলেন, “সাংবাদিকেরা শিক্ষাঙ্গনে চিন্তা ও ন্যায়ের কণ্ঠস্বর। তাদের উপর হামলা মানে সত্যকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক পংকজ রায় স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “ফুটবল মাঠে উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থীর দ্বারা সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, যা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।”
তারা আরও বলেন, “সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষায় একে অপরের পরিপূরক। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।”
অন্য আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত ও সম্পাদক সাজ্জাদ সাব্বির এক বিবৃতিতে বলেন, “সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের মারধর করা হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও মর্মান্তিক। আমরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি।”
তারা আরও বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ভিডিও করতে গেলে তিন সাংবাদিকদের মারধর করেছে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়াও এক সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, মিনহাজ, সৌরভ সোহাগ, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর ও হৃদয়সহ আরও ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী।