মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। সোমবার (২১ জুলাই) কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. হোসেন ইমাম জানান, পোস্টমর্টেমের ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে, সাজিদের মৃত্যু হয়েছে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে, অর্থ্যাৎ ১৬ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে।
তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান চিকিৎসক।
এদিকে রিপোর্ট প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে দাবি করে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ রেখে চলে বিক্ষোভ কর্মসূচি। আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে ইবির সকল সক্রিয় ছাত্রসংগঠন।
শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে এবং ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করা হবে। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হলে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ আল্টিমেটামও দেওয়া হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- সাজিদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করতে হবে এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, মামলার তদন্তভার পিবিআই-এর কাছে হস্তান্তর করতে হবে, প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থাকায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, ক্যাম্পাসে হল ও আশেপাশে সিসিটিভি স্থাপন করাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। তার হত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হাজার শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়। আপনারা যদি মনে করেন দায়সারা তদন্ত চালালেই সব মিটে যাবে, তাহলে ভুল করছেন। ছাত্রসমাজ কী করতে পারে, সময় হলে তা প্রমাণ করে দেবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, “আমরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্তের কাজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এ রহস্য উদঘাটন হবে। তবে পোস্ট মর্টেমের প্রাথমিক প্রতিবেদনের পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন করে। তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি এবং প্রশাসনের সঙ্গে বসার কথা বলেছি কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো সাড়া দেয়নি।”
উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তার বাবা একটা মামলা করেছে। পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া বা প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করা এই বিষয়ে এখনও পরিকল্পনা করা হয়নি।”
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে অনেকের মনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।