পবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে অব্যবস্থাপনা সহ খাবারের মান ও দামের মধ্যে অসঙ্গতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিম্নমানের খাবার, দামের তুলনায় মাছ মাংসের ছোট পিস, সবজির ভিন্নতার অভাব, ডাইনিং পরিচালনাকারীদের অধিক মুনাফা অর্জনের তাড়না ও প্রশাসনের নির্দেশনা নিয়মিত পালনে অবাধ্যতার জন্য দিন দিন ডাইনিংয়ের খাবারে তাদের আগ্রহ কমছে। তাদের অভিযোগ ডাইনিংয়ে দু’বেলা খাবারেই অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিনের খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা বলছেন ডাইনিংয়ের খাবারের স্বাদ, মূল্য, পুষ্টিমান ও পরিচ্ছন্নতা আশানুরূপ নয়। অনেকেই খাবারের দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণে কিংবা মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন না। ফলে শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী হলে খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ক্যাম্পাসের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে অথবা নিজেরা রান্না করে খাচ্ছেন। এতে করে ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিংগুলোতে নিম্নমানের চালের ভাত দেওয়া হয়। প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে থাকে একই রকম আইটেম। অনেকসময় দুপুর ও রাতে একই ধরনের মাছ, মাংস এবং ডিম সরবরাহ করা হয়। এর পরিমাণও খুবই অল্প। কিছু কিছু খাবারের দাম আগের থেকে বাড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (পবিপ্রবিসাস) বিভিন্ন হলের ডাইনিংয়ে খোঁজখবর ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। সকলেই ডাইনিং নিয়ে আক্ষেপ ও অস্বস্তি প্রকাশ করেন। প্রস্তাবিত বিজয়-২৪ হলে (বঙ্গবন্ধু হল) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলটিতে প্রতিনিয়ত ডাইনিং পরিচালনাকারীরা খেয়ালখুশিমতো ডাইনিং পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীরা এই হলের ডাইনিং সম্পর্কে জানায়, আগের তুলনায় খাবারের মান ও ভিন্নতা কিছুটা বাড়লেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও মূল্য বৃদ্ধি। তারা জানায়, মাছের পিস দামের তুলনায় নিয়মিত ছোট করা হয়, ডিম-ভাতের মূল্য আগে ৩০ টাকা থাকলেও এখন নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা, লটপটির মূল্য আগে ছিলো ৩০ টাকা যা বেড়ে এখন ৪০ টাকা করা হয়েছে, স্বল্প পরিমাণ গুঁড়া মাছ আলুর সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ টাকায় যা আগে ছিলো ৩০ টাকা। শিক্ষার্থীদের দাবি, মাঝেমধ্যে প্রভোস্ট স্যার তদারকি করতে আসলে কিছু সময় ডাইনিংয়ে ভালো খাবার দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সময় যত যায় ডাইনিংয়ের খাবারের মান ইচ্ছে করে তারা কমাতে থাকেন। একই চিত্র দেখা গেছে পবিপ্রবির প্রতিটি হলে।
বিজয়-২৪ হলের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মীর মো. নূরুন্নবী বলেন, “আমরা ডাইনিংয়ে উচ্চমূল্য দিয়েও খাবারের মান সন্তোষজনক পাই না। অনেক সময় খাবারে দুর্গন্ধ থাকে, তরকারিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, মাংস বা মাছের পরিমাণ খুবই কম। অথচ এর জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমাদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা অর্থাৎ আর্থিক অনুদান প্রদান করে হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান ও দাম শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে রাখে। কিন্তু এখানে এর ছিটেফোঁটা নেই। বরং হলের ডাইনিংয়ে ২ বেলা খেতে ১০০ টাকার বেশি লাগে। দিনে তিনবেলা খেলে ১৫০ টাকা খাবারের পেছনে ব্যয় হয় যা সবার পক্ষে ব্যয়বহুল। আমরা চাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাইনিংগুলোতে স্বল্প দামে খাবারের ব্যবস্থা করবেন।”
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হলের শিক্ষার্থী মেহেদী বলেন, আমাদের হলের ডাইনিং এর দায়িত্ব ছাত্রদেরকেই দেয়া হয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত একটা সময় পরপর ছাত্রদের পরিবর্তন করে নতুনদের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে হল প্রভোস্ট তা করে না বা চাপ দেয় না। তাই একই ব্যক্তি মাসের পর মাস ডাইনিং এর দায়িত্ব নিয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে। দুপুরে একবেলার খাবার ঠিক থাকলেও রাতের খাবার নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ। দেখা যায়, ডিম আর সামান্য সবজির দাম ৪৫ টাকা করা হচ্ছে, যেখানে অন্য হলগুলোতে ৩০-৩৫ টাকার মধ্যেই দাম।
এ ব্যাপারে বিজয়-২৪ হলের ডাইনিংয়ের জুনিয়র সহকারী মনির বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি পাই না। ভর্তুকি পেলে খাবারের মানটি আরো ভালো করতে পারবো। তার কাছে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের ডাইনিংয়ের খাবারে আগ্রহ কমার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির হল প্রভোস্টের কনভেনর অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, আমি আসার পর হলের প্রতিটি খাবারের মূল্য ৫ টাকা করে কমিয়েছি ও খাবারের মান বৃদ্ধি করেছি। ডাইনিংয়ে নিয়মিত তদারকি চলে তারপরো দু-একবেলা এদিক সেদিক হয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি শিক্ষার্থীদেরও ডাইনিং পরিচালনাকারীদের উপর নজরদারির আহ্বান জানান। ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমরা ডাইনিংয়ে অতিরিক্ত লোকদের বেতন সহ ডাইনিং ভাড়া ফ্রি, পানি, ইলেকট্রিসিটি ও অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছি।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু আশ্বাস নয় বরং বাস্তবসম্মত পরিবর্তন দেখতে চান তারা। তারা চান, খাবারের মানের উন্নতি ঘটুক এবং দাম যেন যুক্তিসঙ্গত হয় যাতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে হলে থাকা ও খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন।
আবু হাসনাত তুহিন
পবিপ্রবি প্রতিনিধি