ইকবাল হাসান মাহমুদ সাজিদ
-বুটেক্স প্রতিনিধি
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শহীদ আজিজ হলে দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের খাবার ও খাবার পরিবেশনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হলসূত্রে জানা যায়, হলের ডাইনিংয়ে তুলনামূলক ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হলেও ক্যান্টিনের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর।
শহীদ আজিজ হল বুটেক্সের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হল। কিন্তু ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। খাবারের স্বাদ, মান, পুষ্টিগুণ ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, খাবারের দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও তা পর্যাপ্ত বা মানসম্মত নয়। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে খাওয়া এড়িয়ে আশপাশের দোকান ও হোটেলে নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জন্য বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
হলের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই শহীদ আজিজ হলের ক্যান্টিন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। যেখানে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন শিক্ষার্থীবান্ধব, সেখানে আজিজ হলের ক্যান্টিন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাম এবং খাবার পরিবেশনার অব্যবস্থাপনা নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যান্টিনের মালিকানা বদলিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, যাতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ হয়।”
একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন মারুফ বলেন, “ক্যান্টিনের খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ডাইনিং বন্ধ থাকলে আমাদের অধিকাংশকেই বাইরে খেতে যেতে হয়। বাবুর্চির দক্ষতার অভাব এবং খাবার পরিবেশনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে আসছি। খাবারের আইটেমেও নেই কোনো বৈচিত্র্য। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হলের গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করা খাবার বাইরে, বিশেষ করে পলিটেকনিকের সামনে বিক্রি করা হয়। আমরা চাই হল প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।”
৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান বলেন, “ক্যান্টিনে প্রায়ই মোটা চালের ভাত রান্না করা হয়, যা আমাদের জন্য খাওয়াটা খুবই কষ্টকর। সকালে প্রয়োজনীয় ভর্তা-ভাজি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। আর পরোটার সঙ্গে যে ভাজি দেওয়া হয়, সেটাকে আদৌ ভাজি বলা যায় কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে! নিরুপায় হয়ে আমাদের অনেক সময় এই নিম্নমানের খাবারই খেতে হয়। এছাড়া ডাইনিং বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা যেন ক্যান্টিন ম্যানেজার রনির কাছে জিম্মি হয়ে যায়। খাবারের গুণমানের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে, অথচ বিভিন্ন অজুহাতে দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দাবি, রনিকে দ্রুত ক্যান্টিন থেকে অপসারণ করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, যার অধীনে শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন খাবার পাবে।”
ক্যান্টিন ম্যানেজার মো. রনি বলেন, “আগের বাবুর্চি চলে যাওয়ার পর কয়েকদিন আমি নিজেই রান্না করেছি। আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে নতুন বাবুর্চি পেলে খাবারের মান আরও উন্নত হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ক্যান্টিনে এত কম শিক্ষার্থী খায় যে খরচই উঠে না। তাই আমি পলিটেকনিকের সামনে কিছু খাবার বিক্রি করছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আনুমানিক বিশ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। আমি চাই অন্তত ঈদ পর্যন্ত আমাকে ক্যান্টিন চালানোর সুযোগ দেওয়া হোক, যাতে এই টাকা তুলতে পারি এবং স্টাফদের বেতন পরিশোধ করতে পারি।”
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদ সরকার বলেন, “আমরা ক্যান্টিনের মালিককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, রনিকে বাদ দিয়ে ক্যান্টিন চালাতে হবে, নাহলে ক্যান্টিন ছেড়ে দিতে হবে। ইতিমধ্যে ক্যান্টিন বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরে রনি অনুরোধ করেছিল যে সে খাবারের মান উন্নত করবে এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আবারও অভিযোগ করছে যে কোনো উন্নতি হয়নি। সে যদি খাবারের মান উন্নত করতে না পারে, তাহলে এখানে ক্যান্টিন চালানোর সুযোগ নেই। তাদের সঙ্গে চুক্তি মে মাস পর্যন্ত থাকলেও এতদিন অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমরা খুব শিগগিরই নোটিশ দেব, যাতে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যান্টিন ছেড়ে দেওয়া হয়।”