মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কয়েকজন সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন। শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
শনি ও রবিবার (১২ ও ১৩ জুলাই) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ, শাখা ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন ও শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবসার নবী হামযা স্বাক্ষরিত আলাদা তিন বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। এতে তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে শাখা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেন, “আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
ছাত্রদল আরও উল্লেখ করে, ক্যাম্পাসে সংবাদকর্মীরা সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মধ্যে সহনশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।
তারা বলেন, “ঘটনাটি অনভিপ্রেত হলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।”
আলাদা বিবৃতিতে রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইবি ছাত্রশিবির সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, “১২ জুলাই বিকেল ৫টায় অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় সাংবাদিকদের মারধরের খবর শুনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
তারা বলেন, “আমরা আহত সাংবাদিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করুন। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
অন্য আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “১২ জুলাই বিকেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির সময় সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের উপর নির্মম হামলা চালানো হয়। এ হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত।”
তারা জানান, “সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ ভিডিও ধারণ করতে গেলে শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং পরে দলবেঁধে সাংবাদিকদের মারধর শুরু হয়। এতে নূর ই আলম, রবিউল আলমসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হন।”
ছাত্র ইউনিয়ন আরও দাবি করে, “ঘটনার পরপরই হামলাকারীরা একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালায়, যেখানে একজন নারী শিক্ষার্থীকে ভিকটিম সাজিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।”
তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।”
প্রসঙ্গত, আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ভিডিও করতে গেলে তিন সাংবাদিকদের মারধর করেছে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়াও এক সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল ৩ টায় এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত (২২ ঘন্টা) মোবাইল ফেরত দেননি তারা।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, মিনহাজ, সৌরভ সোহাগ, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর ও হৃদয়সহ ২০-২৫ জন।