রিপন মারমা কাপ্তাই:
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে আব্দুর রহিম নামে এক যুবক মুরগির খামার করে এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তার এক আত্মীয় থেকে পরামর্শ আর নিজ উদ্যোগে সৌখিনভাবে গড়ে তুলেছেন লেয়ার জাতের মুরগির খামার। তার এ খামারটি থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে হাজার খানেক ডিম। মো:আব্দুর রহিম পেশায় একজন উদ্যোক্তা । কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়তি লাভের আশায় তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন লেয়ার জাতের মুরগির খামার। মুরগির খামার করে অনেকে হোচট খেলেও লাভবান রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম এলাকার মুসলিম পাড়ার মো: আব্দুর রহিম। কৃষি কাজের পাশাপাশি ২০০৪ সাল থেকে বাড়ির পাশে ব্রয়লার মুরগি লালন পালন শুরু করেন ৩শ মুরগী নিয়ে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার এক আত্মীয়ের পরামর্শ নিয়ে ব্রয়লার ছেড়ে লেয়ার মুরগির জাতের সৌখিন খামারের যাত্রা শুরু করেন। লোহার তৈরি খাঁচায় রাখা মুরগিগুলোকে পরিস্কার পাত্রে নিয়মিত খাবার পরিবেশনে এখন কাজ করছেন তিনি । খামার কাজের লোকেরা একটা সময় কাজ না পেয়ে অনেকেই নানা অপরাধ মূলক কাজে জড়িত হলেও তার মত স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠায় সেখানে কাজ পেয়ে তারা খুশি।
বর্তমানে এই খামারে প্রতিদিন ২-৩ জনের অধিক কাজ করছেন। মুরগি লালন পালনে তার খামারে এখন সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২ শত। এ থেকে নিয়মিত ডিম উৎপাদন হচ্ছে হাজার খানেক। আর এসব ডিম ক্রয়ে উপজেলা থেকে খামারে ছুটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তার সফলতায় উদ্যোগী হচ্ছেন আশপাশে অনেকে।
আব্দুর রহিম বলেন, আমি সবার প্রথম ৩ শত লেয়ার মুরগি দিয়ে এই খামারের যাত্রা শুরু করি।
এখন প্রায় ১ হাজার ২ শত মুরগী রয়েছে আমার খামারে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এসব মুরগি একদিনের বাঁচ্চা কিনে এনে খামারে ১৪ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। পরে বাজারে মাংসের জন্য বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন হাজার খানেক ডিম উৎপাদন হয়।যা নিজ উপজেলার চাহিদা পুরন করা সম্ভব হয় না বলে মনে করি। প্রতি ১’শ ডিম ১ হাজার টাকা দরে বাজার পাইকারি বিক্রি করতে পারি।তাতে মাসে সকল ধরনের খরচ বাদ দিয়ে আমার লক্ষ টাকার উপরে লাভ থাকে।তবে ডিমের বাজারের উপর নির্ভর করে। যদি ডিমের বাজার ভালো থাকে তবে আরো বেশি লাভ হয়।খামারের বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন,আগে আমরা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করতাম চিটাগাং যেতাম কিন্তু রহিম ভাইয়ের এই খামার হওয়ার পর থেকে আমরা এখানে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছে তাতে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। পাশা পাশি নিজেরাও কৃষি কাজ করি।
খামারী মো: আব্দুর রহিম বলেন যুব উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা খামারি’রা স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোগতা। তিনি আরো বলেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রায়শ আমার খামার পরিদর্শন করেন,নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন রাতে কি আমরা উপকৃত হয়ে থাকি।
লেয়ার মুরগির খামারের পাশাপাশি আব্দুর রহিম ডেইরি ফার্ম ও গড়ে তুলেছেন। তার ডেইরি ফার্ম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। ডেইরি ফার্মের জন্য তিনি বাড়ির পাশে নেপিয়ার জাতের চাষ করেছেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের ব্যবস্থাপনায় ৬০ শতক জমিতে তিনি ঘাস চাষ করেছেন। ডেইরি ফার্মের গোবর, লেয়ার খামারের মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে তিনি নিজ খরচে একটা বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করেছেন। এ থেকে তিনি রান্নার জন্য নিজের প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. এনামুল হক হাজারী বলেন, আব্দুর রহিম খুব ভালো একজন উদ্যোক্তা, তিনি খামার করে আমার উপজেলা সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের উপজেলায় রহিমের খামার দেখে আস্তে আস্তে এরকম অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে আমরা রহিমের মতো আরো উদ্যোক্তা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছি।