নাজমুল হোসেন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে গতবছরের তুলনায় আবহাওয়ায় অনুকুলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু আলুরদাম কৃষকের প্রত্যাশা অনুযায়ী না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ কৃষকরা। এক কেজি আলু বিক্রি করেও এককাপ চা আর পান পাওয়া যাই না বর্তমান সময়ে। আশানুরূপ ফলন পেলেও দাম না পাওয়াতে অনেক আলু চাষি এখন বড় একটা ক্ষতির মুখে।আর এতেই অনেক কৃষক আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। জমিতে আলু বয়স পার হলেও দাম বৃদ্ধির আশা অনেকেই ক্ষেত থেকে এখনো আলু উত্তোলন করছেন না।

উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের রাজু আহম্মেদ নামে এক কৃষক জানায়,দুই বিঘা আলু চাষ করতে যে পরিমাণে খরচ করেছি এখন আলু বিক্রির সময় হিসাব করে দেখি অর্ধেকের বেশি আমার লস হচ্ছে।এখন কি করবো আলু বিক্রি করবো নাকি হিমাগারে রাখবো। তাও আবার হিমাগার কতৃপক্ষ এবার আগের তুলনায় ভাড়া অনেকটা বৃদ্ধি করে রেখেছে।
একই উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধারই গ্রামের বেল্লাল হোসেন জানায়,বর্তমানে খাওয়ার জন্য যেসব আলু বিক্রি হচ্ছে তার জাত ভেদে প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে স্টিক লাল আলু সাড়ে ১০ টাকা ডাইমন জাতের সাদা আলু সাড়ে ১১ টাকায়, অন্যদিকে গ্যানুলা সাদা আলু সাড়ে ৮ টাকায় ও দেশী আলু প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩ কি ১৪ টাকায়।যেখানে কিছুদিন আগেও আলু জাত ভেদে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকা ধরে।অপদিকে যে সব আলু হিমাগারে রাখার জন্য বিক্রি হয় তার দাম একটু বেশি যেমন লাল আলু ১৫ টাকা ও সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়। আলুর বাজার এভাবে চললে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।
তবে উপজেলার অনেক কৃষক বলছেন আলু রোপনের সময় বীজ প্রতি কেজি কিনতে হয়েছে বিভিন্ন জাত ভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকায় আর এখন বীজের আলু বিক্রি করতে হচ্ছে জাঁত ভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। কিনতে গেলে দাম বেশি বিক্রি করার সময় দাম পায়না কৃষকরা।এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কৃষকদের মরণ ছাড়া কোন উপায় নাই।
দুলাল নামে এক কৃষক জানায়, এবছর ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। দুই বিঘা জমিতে আগাম সাগিতা ও গ্যানুলা জাতের আলু চাষ করে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।তবে লেটপ্লানে স্টিক জাতের আলু চাষ করে বর্তমানে দুই বিঘা জমির খরচ উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছি লাভ তো দুরের কথা। তবে যেসব কৃষক আগামা আলু চাষ করেছিল তারা এবার লাভবান হলেও লেটপ্লান করে যেসব কৃষক বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছেন তারা প্রায় সবাই এখন লাভের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক কৃষক বলছেন, এভাবে যদি ক্ষতির স্বীকার হতে হয় তাহলে পরিবার চালাবো কিভাবে, আর ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করবো কি দিয়ে। অন্যদিকে তো ঋণের চাপ মাথার উপরে আছেই। তাই আমরা কৃষকরা চাই বর্তমান সরকার যদি বিভিন্ন দেশের সাথে আলু রপ্তানির বিষয়ে আরো একটু বেশি জোর দেয় তাহলে হইতো আমাদের এতটা ক্ষতি হবে না।
সাহেরুল ইসলাম নামে আলুর এক পাইকার জানায়,যে দামে আলু বর্তমানে বাজারে আমাদের কিনতে হয়। ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে তার থেকে দুই তিন টাকা ধরে খরচ হয় প্রতিকেজি আলুতে।এর পরে ঢাকায় আলু বিক্রি হয় প্রতিকেজি ১৫ কি ১৬ টাকা ধরে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসার শহিদুল ইসলাম যানাযায়,গত বছর এউপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ৩২ শ ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হলেও এবছর প্রায় ৪২ শত ৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছে কৃষকরা। তবে আগের তুলনায় বর্তমান বাজারে আলু দাম কিছুটা কম। তবে আমরা ৫ শ মেট্রিক টন আলু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে আরো রপ্তানি করতে পারলে কৃষক অনেকটা দাম পুষিয়ে নিতে পারবে।এবং এর মাধ্যমে আমরা বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।যা দেশের জন্য একটা ভালো দিক।
নাজমুল হোসেন
রাণীশংকৈল ঠাকুরগাঁও