মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা (সাঘাটা, ফুলছড়ি): গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সারা বছরই প্রচুর ফসল উৎপাদন হলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতা ও নির্দিষ্ট ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে গিয়ে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম নৌকা, আর শুকনো মৌসুমে নৌ-ঘাট পর্যন্ত দুই-তিন মাইল হেঁটে যেতে হয়। কৃষিপণ্য মাথায় বা কাঁধে বহন করে নৌকায় তুলতে হয়, তারপর সেগুলো আটো বা ভ্যানে করে হাটবাজারে নিয়ে যেতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়, ফলে কৃষকদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
ফুলছড়ির চর ফজলুপর গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন বলেন, “অনেক দূর হাঁটতে হয়, কোনো যানবাহন পাই না। ফসল কাঁধে নিয়ে নাও ঘাটে যেতে হয়, তারপর নদী পার হয়ে বাজারে নিতে হয়। এত কষ্ট করেও দামে পোষায় না।”
চর মধ্য খাটিয়ামারি গ্রামের কৃষক টিটু মিয়া বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট করে ফসল ফলাই। কিন্তু পাইকাররা এসে খুব কম দামে কিনে নিয়ে যায়। বাজারে আমাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ কম, ফলে বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করতে হয়।” একই অভিযোগ হায়দার আলী, রুবেল মিয়াসহ চরাঞ্চলের অনেক কৃষকের।
ফুলছড়ি বাজারের এক ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, “কৃষকরা সরাসরি বাজারে না আসতে পারায় মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের সুযোগ নেয়। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। এ সমস্যার সমাধান দরকার।”
সমাজ কর্মী আপেল মাহমুদ বলেন, কৃষকদের পাশাপাশি চরাঞ্চলের বাসিন্দারা স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে চরের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত হবে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী মণ্ডল বলেন, “যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে ১২ মাসে তের ফসল ফলিয়েও তারা ক্ষতির মুখে পড়তে থাকবেন।”
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মণ্ডল বলেন, “সরকার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, যেখানে কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রসহ নাগরিক সুবিধা থাকার কথা। গত বছর একটি ইউনিয়নে এর সমীক্ষা হয়েছিল, তবে এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।