সউদ আব্দুল্লাহ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিয়ালা গ্রামের আসলাম হোসেনের জীবনে ছিল ধূমপান, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবহেলার করাল ছায়া। একসময় পরিচিত ছিলেন ‘খোর আসলাম’ নামে। কিন্তু সেই আসলামই এখন একজন সফল হাঁস খামারি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী একজন স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা।
৩৮ বছর বয়সী আসলাম প্রতিদিন সিগারেটের পেছনে খরচ করতেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। দিনমজুরি করে চলতো সংসার, পরিবারে ছিল অভাব-অনটন। কিন্তু হঠাৎ এক জুমার দিনে মসজিদে ধূমপানের গন্ধে মুসল্লিরা তাঁর পাশ থেকে সরে গেলে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। সেই দিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার।
ধূমপান না করে এক মাসে জমিয়ে ফেলেন প্রায় ৪ হাজার টাকা। সেই টাকায় শুরু করেন হাঁস পালন। শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৪০টি হাঁস দিয়ে। আর এখন তাঁর খামারে রয়েছে প্রায় ১৮’শ হাঁস।
প্রতিদিন খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে স্থানীয় হাটে বিক্রি করছেন তিনি। শুধু ডিম বিক্রি থেকেই বছরে গড়ে ২-৩ লাখ টাকা আয় করছেন। হাঁসের পাশাপাশি তিনি একটি বাচ্চা উৎপাদনের ইউনিটও চালু করেছেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ১০-১২ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন।
আসলাম হোসেন বলেন,
“আগে সিগারেটে টাকা উড়িয়ে দিতাম, এখন সেই টাকায় চলে সংসার। আমি চাই, সবাই সাহস নিয়ে কিছু একটা শুরু করুক।”
খামারে কর্মরত নারী শ্রমিক শাহিদা বেগম বলেন,
“আগে আমাদের ঘরে অভাব লেগেই থাকতো। এখন খামারে কাজ করে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি। আসলাম ভাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।”
কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন,
“আমরা আসলামের মতো উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, ভ্যাকসিন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকি। হাঁস পালন একটি লাভজনক খাত, এবং সরকার নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”
ধূমপানের ছায়া থেকে উঠে এসে এখন আসলাম নিজেই অনুপ্রেরণার প্রতীক। নিজের ভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের জীবনেও এনেছেন পরিবর্তন। ব্যক্তি উদ্যোগে কীভাবে ভাগ্য বদলানো যায়—আসলাম হোসেন তার জীবন্ত উদাহরণ।