মোঃ আব্দুল কুদ্দুস,
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সরিষার রাজ্য খ্যাত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। ভুট্রার বাম্পার ফলন, বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায়, অল্প পরিশ্রম ও কম খরচে বেশী লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রতিবছরই বাড়ছে ভুট্রার চাষ। এ আবাদে পোকা-মাকড়ের ঝামেলা কম, এবং ভুট্রার গাছ ও মোচা সাইলেজ করে গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারায় ভুট্রা চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এ উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৫ হেক্টর। বীজ বপন থেকে মাত্র চার মাসের মধ্যেই এ ফসল ঘরে তোলা যায়। বেলে দো-আঁশ মাটি ভুট্রা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। প্রয়োজনীয় জৈব সার প্রয়োগ করে বীজ বপন করে একটু সেচ ও পরিচর্যা করলেই ভুট্রা ফলানো সম্ভব। প্রতি বিঘা পদ্মা-৫৫, সিনজেন্টা এন এইচ-৭৭২০, কে এম এইচ বি-৪১০ ও মেজর ৩৩৫৫ জাতের ভুট্রা ৪০-৪২ মণ করে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। ভুট্রা আবাদে পোকামাকড়ের ঝামেলা কম হওয়ায় অনেকটা নিশ্চিন্তেই ভুট্রা চাষ করা যায়।
চর-বাশুরিয় গ্রামের ভুট্রা চাষী আনছার আলী জানান, বিগত কয়েক বছর ধরেই ভুট্রা চাষাবাদ করে আসছি। এ বছর ৬ বিঘা জমিতে ভুট্রা চাষাবাদ করেছি। আশানুরূপ ফলন পাবো। বর্তমানে বাজারে ভুট্রা ১২০০-১৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ভুট্রার ভালো দাম থাকায় লাভবান আমরা। এছাড়া ভুট্রার গাছ ও মোচা পরিবারের রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। ভুট্রাচাষে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। তাতে করে ভুট্রা চাষাবাদে সবকিছু বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা নূন্যতম ২৮-৩০ হাজার টাকা করে আমাদের লাভ হবে। ভুট্রা চাষ শেষে নিশ্চিন্তেই পাট ও তিল চাষ করা যায়।
ভুট্রা চাষি লালন মোল্লার সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, এবারে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ও ভুট্রা চাষে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা ভুট্রা চাষে খরচ হয় ১৫-১৭ হাজার টাকা। প্রকারভেদে প্রতি বিঘা আধাপাঁকা ভুট্রা ৩০-৩৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গো খাদ্য হিসেবে ভুট্রার সাইলেজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাইকাররা ক্ষেত থেকে কিনে সাইলেজ বানিয়ে প্যাক করে নিয়ে যায়। ফলে ভুট্রা চাষকৃত জমিতে আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারবো বলে আশা করছি।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, এ বছর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্রার চাষ হচ্ছে। পদ্মা-৫৫, সিনজেন্টা এন এইচ-৭৭২০, কে এম এইচ বি-৪১০ ও মেজর ৩৩৫৫ জাতের উদ্ভাবিত ভুট্রার জাতগুলোর ফলন বেশি। বাজার দাম ভালো থাকায় খুশি ভুট্রা চাষিরা। এ কারণে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন ভুট্টা চাষে। এছাড়াও ভুট্রা চাষে উদ্ভুদ্ধ করতে ভুট্রা চাষে ভালো ফলনের জন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সবধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এ বছর কোনো দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিল্লাল হোসেন জানান, ভুট্টার সাইলেস খুবই পুষ্টিকর গোখাদ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ভুট্টার সাইলেস খাওয়ালে দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। এতে খামারিদের খাবার খরচ কমে যায় এবং খামিরীরা লাভবান হয়।