দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগর ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক মোঃ আনিসুর রহমান এখন চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। অনেক কষ্টে জমানো অর্থে তিনি তার কৃষি জমিতে ৭ হাজার মরিচ গাছের চারা রোপণ করেছিলেন, যাতে পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন। কিন্তু তার স্বপ্নে জল ঢেলে দিল দুর্বৃত্তদের ন্যাক্কারজনক এক হামলা।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা তার জমিতে ঢুকে প্রায় ২ হাজার মরিচ গাছ উপড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন আনিসুর রহমান। এতে করে তার স্বপ্নে যেন ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। আনিসুর জানান, “রাতের আধারে কারা এ কাজ করেছে, আমি জানি না। কিন্তু এটা যে পরিকল্পিত, তা স্পষ্ট। এভাবে একটা কৃষকের শেষ সম্বলটুকু কেউ কেড়ে নিতে পারে, ভাবতেই কষ্ট হয়।”
আনিসুর আরও বলেন, প্রতিটি গাছ রোপণ, পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনার পেছনে তার গড়ে প্রায় ১০ টাকা খরচ হয়েছে। শুধু উপড়ে ফেলা ২ হাজার গাছেই তার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ২০ হাজার টাকা। মরিচ গাছগুলোর ফলন দিতে আরও এক মাস সময় লাগত, আর প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৩০০-৪০০ টাকার মরিচ পাওয়া যেত বলে আশাবাদী ছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের ঘটনা যদি বারবার ঘটে, তাহলে কৃষকরা মাঠে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। একজন স্থানীয় কৃষক লালমিয়া জানান, “যদি দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় না আনা হয়, তাহলে আমরা কেউই নিরাপদ নই।”

ঘটনার পরপরই আনিসুর রহমান বোচাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্ত করে দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এটি প্রতিহিংসা বা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এ ঘটনা প্রমাণ করে, এখনও প্রান্তিক কৃষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। একজন কৃষকের শ্রম ও বিনিয়োগ এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শুধু একটি ব্যক্তির ক্ষতি নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতির শামিল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।