বিধান মন্ডল (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের নগরকান্দায় চাঁদাবাজি ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে গোলাম হায়দার (৬০) নামে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে (মেজর) গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। এ সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরহাদ হোসেনসহ (৪৫) আরো ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দারের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নগরকান্দা থানার ইনচার্জ (এসআই) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, সোমবার বিকেলে কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রাজু মোল্যা বাদী হয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দার ও তার সহযোগী ফরহাদ খানের নামে চাঁদাবাজি ও হত্যার চেষ্টার একটি মামলা দায়ের করেন। পরে অভিযান চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হায়দার এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরহাদ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেন যৌথবাহিনী।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রাজু মোল্যা বলেন, সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন মেজর গোলাম হায়দার। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় গত ১ জুন তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে ওই রাতেই যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার।
স্থানীয়রা জানান, অভিযানের সময় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে গুজব রটান তার সহযোগী ফরহাদ হোসেন। এতে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে পুলিশ সাইরেন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানায় যে এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এলাকাবাসীর সহায়তায় ফরহাদসহ তিনজনকে প্রেপ্তার করা হয়। পরে মেজর হায়দারকেও নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরদিকে গত শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নে ভবুকদিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলাম বর্ষার উপর হামলাকে ঘিরে উত্তেজনার সময় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ চলাকালে উপস্থিত সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের সাথে উগ্র আচরণ ও অশোভন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন মেজর হায়দার। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার একাধিক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে নিজেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা চাইতেন গোলাম হায়দার। কেউ তালিকা দিতে না চাইলে তার সাথে অশোভন আচরণ করতেন ও ভয়ভীতি দেখাতেন তিনি।