মনির হোসেন, বেনাপোল:
যশোর শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের দর্জি রেজাউল ইসলাম (৪৮) খুন হয়েছেন। অপহরণের এক মাস চার দিন পর তার মরদেহ সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার২৬ এপ্রিল বিকেল চারটার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামের আসামি সবুজের (৩৫) শ্বশুরবাড়ির পাশের একটি বাগান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে কোতয়ালি থানার পুলিশের একটি টিম লাশ নিয়ে যশোরে নিয়ে আসে।
এর আগে নিহত রেজাউলের স্ত্রী শংকরপুরের কামরুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া মমতাজ বেগম কোতয়ালি থানায় গত ২৫ এপ্রিল একটি মামলা করেন। মামলায় সবুজ ও রিপনকে আসামি করে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। সবুজ ওরফে রবিউল শংকরপুরের কামরুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তালতলা বাজার কুড়ি কাউনিয়া গ্রামের হাবি গাজীর ছেলে। আর রিপন হাওলাদার (২৮) যশোরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। বর্তমানে শ্বশুর জাহাঙ্গীরের বাড়িতে থাকে। যদিও মমতাজ বেগম আরো ১৫দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ গত ২৫ এপ্রিল তা মামলা হিসাবে রেকর্ড করে।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, আসামি সবুজ ও রিপন যশোর শহরেই রেজাউলকে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ বস্তাবন্দি করে ইজিবাইকে কিছু দূর নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ও পরবর্র্তীতে বাসে করে সাতক্ষীরায় পাঠায়। সবুজ মরদেহটি তার শ্বশুরবাড়ির পাশে একটি বাগানে পুঁতে রাখে। কয়েকদিন পর বিষয়টি জানতে পেরে সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লা মরদেহ উঠিয়ে পাশের আরেকটি বাগানে পুনরায় পুঁতে রাখে। পুলিশের অভিযানে রোববার২৭ এপ্রিল দুপুরে ওই বাগান থেকেই রেজাউলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লাকে ও আটক করেছে পুলিশ।
নিহত রেজাউলের পরিবার ও পুলিশ জানায়, রেজাউল ইসহাক সড়কে একটি দর্জির দোকান চালাতেন। তার দোকানের পাশেই ছিল আসামি সবুজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তারা। সম্প্রতি রেজাউল জমিসহ একটি বাড়ি ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানতো সবুজ। এই টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করে সবুজ ও রিপন। রেজাউলের সহজ-সরল স্বভাবের সুযোগ নিয়ে তারা তাকে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করে।
নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন, গত ২১ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইল করে রেজাউলকে ডেকে নেয় সবুজ। এরপর তিনি বাড়িতে ফেরেননি। অনেক স্থানে খোঁজ নিয়ে তার কোন অনুসন্ধান করতে পারেননি। পরে আরো খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ২১ লাখ টাকায় বাড়িসহ জমি বিক্রির খবরটি তারা জানতো। সে কারনে প্রায় সময় ওই দুইজন রেজাউলের কাছে গিয়ে গল্পগুজব করতো। পরে সুযোগ বুঝে তাকে ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গত ২৫ এপ্রিল সবুজ ও রিপনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা রেজাউলকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে ঘটনার মূল রহস্য।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। যেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিলো সেখানে আসামি সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্রিফ করবেন।