সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
মৌলভীবাজারের শান্ত জনজীবন কেঁপে ওঠে,যখন গত ৬ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার একটি এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া। অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। হত্যাকাণ্ডের ধরণ,সময় ও পদ্ধতি জনমনে তীব্র প্রশ্নের জন্ম দেয়—এটি কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, নাকি তাৎক্ষণিক কোনো সহিংসতা ?
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এ ঘটনার নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান,ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো—আসল টার্গেট ছিলেন না সুজন মিয়া, বরং ভুল শনাক্তের কারণে প্রাণ হারান এই তরুণ আইনজীবী।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী,হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী এলাকার নজির মিয়া মুজিব (২৫)। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে পাশের বাড়ির এক ব্যাংক সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহকে ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য পূর্বপরিচিত লক্ষণ নাইডুর (২৩) মাধ্যমে ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং মোবাইল ফোনে টার্গেটের ছবি পাঠিয়ে হত্যার নির্দেশনা দেন।
গ্রেফতার হওয়া অপর চার আসামি হল:-
১) রঘুনন্ধনপুর এলাকার মো. আরিফ মিয়া (২৭)।
২) দিশালোক এলাকার হোসাইন আহমদ সোহান (১৯),।
৩) রাজনগরের মাথিউরা চা বাগানের লক্ষণ নাইডু (২৩)।
৪) নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার আব্দুর রহিম (১৯)।
পুলিশ জানায়,গত৬ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ভাড়াটে খুনিরা সুজন মিয়াকে মিসবাহ ভেবে ভুল করেন। চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সুজনকে ভিডিও কলে মুজিবকে দেখানো হয়। নিশ্চিত হওয়ার পর মুজিব বলেন,“ছবির সঙ্গে মিল আছে তো? মারো!” এরপরই সংঘবদ্ধভাবে অতর্কিত ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় নিরীহ সুজন মিয়াকে। ঘটনাস্থলে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন দুষ্কৃতিকারী অংশ নেয়।
পুলিশ সুপার জানান,হত্যার পরিকল্পনা, সহযোগীচক্র ও ব্যবহৃত প্রযুক্তির সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ,কল রেকর্ড ও মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আইনজীবী সুজন মিয়ার নির্মম মৃত্যুতে মৌলভীবাজারজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মীরা বলছেন,“এটি একজন নিরীহ মানুষকে ভুলবশত হত্যা নয়—এটা বিচারব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত।” সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ এই ঘটনাকে ‘মানবিক ভুলের ভয়াবহ মূল্য’ হিসেবে দেখছে।