সউদ আব্দুল্লাহ
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পোড়াগ্যাড়া মাঠে গভীর নলকূপ থেকে তিনটি ১০ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। চুরি করার সময় তারা নলকূপের পাহারাদারকে ঘরের ভেতরে বেঁধে রাখে এবং বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর থেকে ট্রান্সফরমার খুলে কেবল তামার তার নিয়ে যায়। খোল তিনটি তারা ঘটনাস্থলেই ফেলে রেখে যায়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকালে স্থানীয় কৃষকরা ঘটনাটি টের পান। তারা নলকূপের ঘরের জানালা দিয়ে দেখে যে, পাহারাদার দেলোয়ার হোসেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন এবং মুখে কসটেপ লাগানো। পরে মালিক হেলাল উদ্দিন প্রামানিক এসে তাকে উদ্ধার করেন এবং বিষয়টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও থানায় জানান।
শুক্রবার (২ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটেছে এই ঘটনা। অথচ মাত্র এক ঘণ্টা আগেই নলকূপের পাহারাদার দেলোয়ার হোসেন সেখানে পৌঁছে তার দৈনন্দিন পাহারার দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুখোশধারী ৬-৭ জনের এক চোরদল। তারা প্রথমেই দেলোয়ারকে মারধর করে এরপর মুখে কসটেপ লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে ডিপের ঘরের ভিতর। বাইরের দরজায় লাগিয়ে দেয় শক্ত তালা। এরপর তারা নিশ্চিন্তে বৈদ্যুতিক খুঁটির মাথা থেকে ট্রান্সফরমারগুলো খুলে নিচে নামিয়ে নেয় এবং তামার তার সংগ্রহ করে চম্পট দেয়।
৩মে সকালে মাঠে কাজ করতে গিয়ে কৃষকরা জানালা দিয়ে দেখতে পান দেলোয়ার মেঝেতে পড়ে আছেন। তার মুখে কসটেপ, হাত-পা বাঁধা। তারা দ্রুত খবর দেন গভীর নলকূপের মালিক হেলাল উদ্দিন প্রামানিককে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেলোয়ারকে উদ্ধার করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ও থানায় বিষয়টি জানান।
হেলাল উদ্দিন বলেন, “এই মৌসুমেই দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটল। ২ লাখ ১০ হাজার টাকার ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। এখন আবার নতুন করে টাকা দিয়ে কিনে বসাতে হবে। একদিকে ফসলের মৌসুম চলছে, অন্যদিকে আলুর বাজারে দাম নেই। এমন অবস্থায় কৃষক কীভাবে টিকে থাকবে?
তিনি আরও জানান, এই চোরেরা খুবই পেশাদার। তারা খালি ট্রান্সফরমার রেখে শুধু তামার তার নিয়ে যাচ্ছে। খোলগুলো রেখে যাওয়ায় ওগুলো এখন কেবল বোঝা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, চলতি মৌসুমে কালাই উপজেলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৯টি ট্রান্সফরমার ও ১৫টি মিটার চুরি হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই কৌশল: গভীর রাতে হানা, পাহারাদারকে বেঁধে রাখা, এবং কেবল তামার তার নিয়ে যাওয়া।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবু উমাম মো. মাহবুবুল হক বলেন, “এ ধরনের চুরি এখন জেলার প্রতিটি উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। পুলিশকে জানিয়েছি। তবে সমাজের সব পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।