কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ১০ দিনের ব্যবধানে তিনটি পৃথক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।এসব ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গতকাল শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল মধ্যপাড়া গ্রামে এক প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত প্রবাসী জাহিদুল ইসলাম (২৮)। তিনি সনমানিয়া বরকান্দা গ্রামের মৃত হাদিস উদ্দিনের ছেলে। তার মা রোকেয়া বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য (ওয়ার্ড ৭, ৮ ও ৯)। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই রাতে বাড়ির পাশে মুদি দোকানে বসা অবস্থায় ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় জাহিদুলকে উদ্ধার করে প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের ভাইয়ের মেয়ে সাথী বেগম (২৮) বলেন, “কাকা সৌদি প্রবাসী। কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন। তার পাঁচ বছরের মেয়ে রয়েছে। গত রাতে দোকানে বসা অবস্থায় দুর্বৃত্তরা দোকান থেকে ডেকে নিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।” থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, ‘নেশার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’এর আগে গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের বেহাইদুয়ার গ্রামে নাঈম (২৪) নামের এক যুবক খুন হন। নিহত নাঈম ওই গ্রামের নাজিম উদ্দীন ওরফে নাজুর ছেলে। ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, “পূর্বের বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ওসি বলেন, নাঈম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুই মাস আগে সোহেল রানা (৩৫) নামের প্রতিবেশীকে কুপিয়ে আহত করে সে। সোহেল সুস্থ হয়ে এসে বন্ধুদের নিয়ে নাঈমকে আটক করে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এরও আগে, গত ২৫ জুন বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে নার্গিস আক্তার (৪৫) নামে এক গৃহবধূ খুন হন। নিহত নার্গিস আক্তার ওই গ্রামের শহীদ দর্জির মেয়ে এবং আওলাদ হোসেনের স্ত্রী। পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহে স্বামী, ননদ ও ভাসুরপুত্রের সাথে ঝগড়া হয় নার্গিস আক্তারের।
এক পর্যায়ে নাজমুল শেখ (৩০) নামের তার ভাসুরের ছেলে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে গুরুতর আহত হন তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নার্গিস আক্তারের বোন সুফিয়া আক্তার জানান, “আমার বোনকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেছে নাজমুল। স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, “রমজানে নার্গিসের স্বর্ণালংকার চুরি নিয়ে নাজমুলের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়।
এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক দফা সালিশ হয়েছিল। এ ঘটনার জেরেই আজ সকালে মারামারি হয় এবং নার্গিস খুন হন।” থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল দৈনিক বাংলা এফএম কে জানান, পারিবারিক কলহের জেরে গ্রামের বাড়িতে নার্গিস, তার স্বামী আওলাদ হোসেন ও তার ভাইয়ের ছেলে নাজমুল শেখের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় নার্গিস আক্তার নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটলো, প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া দরকার।”