মো. দিল, সিরাজগঞ্জ:
চটকদার প্রচারণা, অলৌকিক সমাধানের মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্মীয় আবহে মোড়ানো কথাবার্তার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের সাধারণ মানুষকে কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারিত করা হচ্ছে। এসব ভুয়া কবিরাজের ফাঁদে পড়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বহু নারী ও পুরুষ। ভুক্তভোগীরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের বড় পাকুরিয়া (ময়নাকুল) গ্রামের বাসিন্দা রাশিদা খাতুন নামের এক নারী দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজির নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘সন্তান হবে’, ‘গোপন রোগ ভালো হবে’, ‘বিয়ে হবে’, ‘প্রেমে সফলতা আসবে’— এমন নানা সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি পানিপড়া, তাবিজ-কবজ ও ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভুলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাশিদা খাতুন গত প্রায় ১০ বছর ধরে তার বাবার বাড়িতে কবিরাজি চিকিৎসার নামে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তার আপন ভাই এ কাজে তাকে সহায়তা করেন। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নিয়মিত লোকজন তার কাছে আসেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশ কিছু লোকজন এগিয়ে এসে নানা অভিযোগ জানান।
স্থানীয়রা জানান, রাশিদা খাতুন কবিরাজি চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। তবে তার কোনো চিকিৎসাই কার্যকর নয়। অনেকে বলেন, সে কী জানে বা কী করে— সেটা পরিষ্কার নয়, তবে ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়ার মাধ্যমে প্রতারণা করেই সে চলেছে। বর্তমানে তিনি নিজেকে কবিরাজ হিসেবে পরিচিতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন জানান, তারা নিঃসন্তান সমস্যা, পারিবারিক সংকট বা ব্যর্থ প্রেমের সমাধানে রাশিদার কাছে গিয়েছিলেন। তার কথায় বিশ্বাস করে অনেক টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু কোনো ফল পাননি। বরং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসময় তারা এই ভুয়া কবিরাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাশিদা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মানুষ বিশ্বাস করে আমার কাছে আসে। আমার পড়া পানি ও ঝাড়ফুঁকে তারা উপকার পায়। আমি টাকা নিই, তবে সেটা রোগীই দেয়।”
এদিকে, কামারখন্দ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফ জানান, “আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”