(জয়পুরহাট) জেলা প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে গরিব খামারিদের থেকে ঘুষ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এলএসপি তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
তারিকুল ইসলাম বড়তারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এলএসপি পদে কর্মরত। জানা যায়, উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় গরিব বা প্রকৃত খামারিদের মধ্যে নগত অর্থ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ হাঁস-মুরগির ঘর বা খামারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়ে থাকে।
এসব সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এলএসপি তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সে এসব প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে ঘুষের টাকা নিলেও প্রণোদনা না দিয়েই সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের চুপ করিয়ে রাখে। প্রাণিসম্পদের অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিসি) প্রণোদনার মুরগি ও ঘর দেওয়ার কথা বলে একটি সংগঠন করে ঐ সংগঠনের ৩০ জন সদস্যদের কাছ থেকে অগ্রিম ১৫শ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। আবার ২০ হাজার টাকা করে সরকার থেকে প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের নামে একাউন্ট খোলা হয়েছিল কিন্তু পরে সেই টাকা একাউন্টে জমা হলেও ভয় ভীতি দেখিয়ে চেক বইয়ে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ তারিকুলের বিরুদ্ধে। পরে ঘর করে দিলেও তা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেশি হবেনা দাবি ভুক্তভোগীদের। আবার ১০ জন খামারিকে গরু দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৩ হাজার করে টাকা অগ্রিম নিয়েছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
উপজেলার ছোটতারা গ্রামের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিসি) ফার্মার ফিল্ড স্কুল (এফএফএস) ও ডেইরি এর সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, তারিকুল এই সংগঠনের প্রতি মাসে ১শ টাকা করে সঞ্চয় নিতো। এর একপর্যায়ে আমাদের গরুর দেওয়ার কথা বলে ১০ জনের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার করে টাকা নিয়েছে। তারপরও বলেছে আপনারা যদি সাড়ে ৩ হাজার করে টাকা দেন তাহলে আরেকজন ৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রেডি আছে।
রিয়াজুল ইসলাম আনসার বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমাদের মুরগি ও ঘর দেওয়ার কথা বলে বড়তারা গ্রামের তারিকুল সদস্য করে নিয়ে প্রথমেই ১৫শ টাকা করে নিয়েছে। পরে মিটিংয়ে নিয়ে বলেছে যে তোমাদের নামে ঘর আসবে ২০ টা করে মুরগি পাবে। তোমাদের নামে একাউন্ট খোলা লাগবে চেক আসবে ২০ হাজার করে টাকা তোমরা উত্তোলন করে ঘর বানায়ে নিতে পারবে। ৩০ জন মহিলাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি প্রলোভন দেখিয়ে সবার থেকে চেকে সই করে নিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে। আমাদের কোন টাকাও দেয়নি কোন মুরগিও দেয়নি। যে ঘরটা করে দিয়েছেন উনি সে ঘরের দাম ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজারের উপরে হবে না। এগুলা হওয়ার পর তারিকুল কে আমি বলি কি হলো ভাই মুরগি দেওয়া কথা মুরগি দিলোনা না, কোন মিটিংও নাই কিচ্ছু নাই? উনি সেইদিন আমার বাড়িতে এসে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে তুই যা পারিস করে নে তোকে দেখে নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তারিকুলের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, প্রণোদনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি ঘর নির্মাণ বাবদ প্রত্যেকের নামে ২০ হাজার করে টাকা আসছে। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট খোলা ও ৩শ টাকার স্ট্যাম্প এগ্রিমেন্ট অন্যান্য খরচ বাবদ মোট ১৪শ ৭০ টাকা আমি নিয়েছি। বাড়ন্ত বাছুর দেওয়ার কথা বলে কারো কাছ থেকে আমি টাকা নেইনি। এছাড়া অন্যান্য যা অভিযোগ তুলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র বলেন, প্রানিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিসি) মাধ্যমে খামারিদের মুরগি পালনের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে ঘর ও খাদ্য দেওয়া হয়েছিল। তবে মুরগি দেওয়া হয়নি। ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেসব সুবিধাভোগীদের থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। এলএসপি তারিকুল টাকা নিলে সেটা সে নিজের স্বার্থে নিয়েছে এখানে অফিসের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা তা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেব।