এস এম হাবিবুল হাসান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় চলতি মাসের শুরু থেকে ওষুধের উপর ৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, পূর্বের ১০ শতাংশ ছাড়ের তুলনায় এটি মূল্যবৃদ্ধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হঠাৎ ছাড় কমিয়ে ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র ও অসুস্থ জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে, ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের নিচে ওষুধ বিক্রি করে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন, ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরার রফিকুল ইসলাম (৬৮), একজন ডায়াবেটিস রোগী জানান, ইনসুলিন ও অন্যান্য ওষুধ কেনা এখন তার পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার মত অনেক রোগীই বলছেন, সামান্য মূল্যবৃদ্ধিও তাদের জন্য বড় চাপ।
একইভাবে রওশন আলী (৭৫) জানান, আগে যেই ওষুধ ৯০ টাকায় কিনতেন, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৯৫ টাকায়। নিয়মিত ওষুধ না খেতে পারায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রায়ই।
ওষুধ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, বড় পুঁজি নিয়ে শহরে দোকান খুললেও অব্যবস্থাপনা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত না পাওয়া এবং বাজার চাহিদা পরিবর্তনের কারণে তিনি দোকান বন্ধ করে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হন।
তিনি আরও জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলোর ক্যাম্পেইনের কারণে কিছু ওষুধ প্রচুর বিক্রি হলেও পরে সেগুলোর চাহিদা কমে যায় এবং সেগুলি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মো. দ্বীন আলী জানান, জেলার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ভেজাল ওষুধের বিস্তার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন দোকান বন্ধ, নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ, ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলকসহ নানা নিয়ম বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়ম মেনে একটি ফার্মেসি চালাতে হলে বছরে ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট সনদ, এসি, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বহন করা ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সবমিলিয়ে, ওষুধের দাম বৃদ্ধি একদিকে যেমন সাধারণ জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদেরও টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কার্যকর সমাধান।